ডিএনসিসির ৮ কোরবানির পশুর হাটে লেনদেন হবে ডিজিটাল

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হাট’ স্লোগানে ডিএনসিসির আটটি কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ব্যবস্থা থাকবে। আর এই হাটগুলোই হবে স্মার্ট হাট।’

সোমবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ শিরোনামে ডিএনসিসির কুরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ব্যবস্থা বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে সব লেনদেন হবে স্মার্টলি। তেমনই কোরবানির পশুর হাটে আমরা ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারবো। ইতোমধ্যে ১০ হাজার খামারির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এই লেনদেনের জন্য। সে ক্ষেত্রে টাকা নিয়ে আমাদের আর হাটে যেতে হবে না, গরুর মালিকরাও টাকা নিয়ে বাড়ির ফেরার সময় সমস্যায় পড়বেন না। কারণ লেনদেন হবে ডিজিটালি।’

তিনি বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন চালুকরণ এবং প্রান্তিক পশু বিক্রেতাদেরকে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগের পাইলট কার্যক্রম গ্রহণ করে, যেখানে ৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এবার আমাদের লেনদেন টার্গেট দেড়শ কোটি টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিএনসিসি অস্থায়ী আটটি কোরবানীর পশুর হাটের আয়োজন ইতোমধ্যে করেছে, এছাড়া দুই/একদিনের মধ্যে আরও একটি হাট চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ ডিএনসিসির এই নয়টি অস্থায়ী হাট এবং গাবতলী স্থায়ী হাট এই মোট ১০টি হাটের বাইরে আর কোনো হাট ডিএনসিসি এলাকায় থাকবে না। এর বাইরে কোথাও যদি রাস্তা দখল করে হাট বসানো হয় তাহলে আমি পুলিশকে অনুরোধ করবো এসব হাটের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নিন। অনুমোদন ছাড়া কোথাও যেন হাট বসতে না পারে।’

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি তখন কোরবানীর বর্জ্য অপসারণ হতো ৪৮ ঘন্টার মধ্যে। এর পরের বছর থেকে কোরবানীর বর্জ্য অপসরণ শেষ করতাম ২৪ ঘন্টার মধ্যে। গত কোরবানীর ঈদে বর্জ্য অপসারণ করেছি ১২ ঘন্টায়। এবার ঘোষণা দিতে চাই, সবার চেষ্টায় এই ঈদে আমরা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আট ঘন্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করবো। এবার আমাদের টার্গেট আট ঘন্টার মধ্যেই কোরবানীর বর্জ্য অপসরণ করা।’

এ সময় কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পাশাপাশি আমি নিজেও মাঠে থাকব বলে ঘোষণা দেন তিনি।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘কোরবানীর বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে জড়িত ডিএনসিসি’র সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য তদারকি টিম, কমিটি গঠন করে দিয়েছি। বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে আমাদের ১১ হাজার কর্মী মাঠে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা কোরবানি করবেন সেসব নাগরিকদের জন্য নয় লাখ বায়োডিগ্রেডেবল (পরিবেশবান্ধব) পলিব্যাগ আমরা বিতরণ করবো। এই পলিব্যাগে কোরবানীর বর্জ্য ঢুকিয়ে আপনারা রেখে দেবেন, সেগুলো আমরা অপসারণ করে নেব। তবে অনুরোধ এসব পলিব্যাগে আপনারা যেন মাংস ঢুকিয়ে ফ্রিজে না রাখেন। এগুলো বর্জ্য অপসারণের জন্য আমরা তৈরি করেছি।’

ডিএনসিসির আওতাধীন কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর মধ্যে যে হিসেবে ডিজিটালি লেনদেন হবে,

আটটি স্মার্ট হাটের মধ্যে রয়েছে, উত্তরা দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নং সেক্টর সংলগ্ন বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদ নগর) সংলগ্ন খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা,বাড্ডা ইষ্টার্ণ হাউজিং আফতাব নগরস্থিত ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ পর্যন্ত (যা সাবেক বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের অংশ), মোহাম্মদপুর বছিলাস্থিত ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর গাবতলী গবাদি পশুর হাট, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড নং-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা এবং ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠের খালি জায়গায় বসা হাট,

ডিএনসিসির পশুর হাটে ১০টি ব্যাংক (এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্যা সিটি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক), তিনটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম (এমেক্স, মাস্টার কার্ড ও ভিসা), চারটি এমএফএস প্রোভাইডার (বিকাশ, নগদ, উপায় ও এমক্যাশ) ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ঢাকা উত্তর সিটির আটটি হাটে ডিজিটাল বুথ স্থাপন করে অর্থ তাৎক্ষণিক ভাবে ক্রেতার হিসাব থেকে বিক্রেতার হিসাবে পৌঁছে দেবে এবং লেনদেনে নগদ অর্থের ব্যবহার হ্রাসকল্পে কাজ করবে। এতে করে নগদ অর্থ লেনদেনের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি লেনদেনকারীদের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা রেকর্ড সৃষ্টি হবে। সৃষ্ট রেকর্ড পশু বিক্রেতাদেরকে ভবিষ্যতে সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তিসহ বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা গ্রহণের জন্য সহায়তা করবে।

মাস্টার কার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ জিয়াউল হক, এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হুসাইন, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন প্রমুখ।

-এসআর