ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: করোনা মহামারি নির্মূলে দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা সহায়তা দেওয়ার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক জোট কোভ্যাক্স জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ায় আর কোনো টিকার ডোজ পাঠানো হবে না।
২০২২ সালে যেসব দেশে টিকা সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কোভ্যাক্স, সেই তালিকা থেকে উত্তর কোরিয়ার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত বছর কয়েক দফায় ডোজ করোনা টিকার ডোজ দেশটিতে পাঠানো হয়েছিল কোভ্যাক্সের পক্ষ থেকে। কিন্তু টিকার ডোজের প্রতিটি চালানই ফিরিয়ে দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন সরকার।
বিশ্বের দরিদ্র ও অনগ্রসর দেশগুলোকে টিকা সহায়তা দিতে ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও টিকা সহায়তা প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্যাভির যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয় কোভ্যাক্স। গত বছর উত্তর কোরিয়ায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাঠানো হয়েছিল কোভ্যাক্সের পক্ষ থেকে।
সেই সহায়তা ফিরিয়ে দিয়ে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার বিরুদ্ধে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ থাকায় এই চালান নেবে না উত্তর কোরিয়া।
তারপর ওই বছর চীনের করোনা টিকা সিনোভ্যাকের ৩০ লাখ ডোজের চালান দেশটিতে পাঠিয়েছিল জাতিসংঘভিত্তিক সংস্থা ইউনিসেফ। সেই চালানও ফেরত পাঠায় উত্তর কোরিয়ার সরকার এবং তার কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ায় কোনো করোনা রোগী নেই।
পর পর কয়েকবার টিকার চালান গ্রহণ না করায় এবার তাই কোভ্যাক্সও দেশটিতে সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক এই জোটের এক মুখপাত্র এ বিষয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে টিকা সহায়তা পাঠানোর একমাত্র কারণ হলো বিশ্ব থেকে মহামারি নির্মূল করা। উত্তর কোরিয়ার সরকার যখন করোনা মহামারিকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করবে, কেবল তখনই দেশটিতে সহায়তা পাঠানো যেতে পারে।’
‘তবে আমরা একেবারে হাত গুটিয়ে বসে নেই। মহামারি নির্মূলে কার্যক্রম শুরু করতে উত্তর কোরিয়ার সরকারের সঙ্গে গ্যাভি ও কোভ্যাক্স প্রতিনিধিদের আলোচনা অব্যাহত আছে,’- বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন ওই মুখাপাত্র।
বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকা দেশ উত্তর কোরিয়া বরাবরই বলে আসছে- দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী নেই। তবে সরকারি এই দাবি সত্যতা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ঘোরতর সন্দিহান।
২০২০ সালে মহামারি শুরুর প্রথম দিকে বিশ্বের যেসব দেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ করেছিল, তাদের মধ্যে উত্তর কোরিয়া অন্যতম। বিশ্বের গুটিকয় যেসব দেশের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও লেনদেন ছিল, দীর্ঘ দুই বছর সীমান্ত বন্ধ থাকায় তা তলানিতে ঠেকেছে।
তার ওপর, টাইফুন, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি দেশটিতে তীব্র হয়ে উঠেছে খাদ্যাভাবও। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই।
অবশ্য বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তাসংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, বৈশ্বিক মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি মেরামতের জন্য জাতীয় বাজেটের ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।