ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: শুরু থেকেই ভারতে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা। ভ্যাকসিন পেতে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পাশাপাশি নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। এ অবস্থায় ভ্যাকসিন খোলা বাজারে বিক্রির পরিকল্পনা দেশটির সরকারের। তবে তার জন্য আরও অন্তত ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, বর্তমানে শর্ত সাপেক্ষে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মিলছে করোনা ভ্যাকসিন। দীর্ঘ দিন ধরেই আলোচনা চলছিল খোলা বাজারে কোভিড-১৯ টিকা বিক্রি নিয়ে। এরপর গত ১৯ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি কোভিড ভ্যাকসিন বিক্রির সিদ্ধান্তে সায় দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ডিজিসিআই ঘোষণা দিয়েছে, ‘এবার খোলা বাজারেও পাওয়া যাবে করোনা ভ্যাকসিন।’
এর আগে, খোলা বাজারে বিক্রির অনুমোদন পাওয়ার জন্য গত বছরের ২৫ অক্টোবর ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার কাছে আবেদন করেন সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) অধিকর্তা প্রকাশ কুমার সিং। এরপর সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারত বায়োটেকের পূর্ণ সময়ের অধিকর্তা ভি কৃষ্ণা মোহন এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জমা দেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে খোলা বাজারে বিক্রির জন্য আবেদন চাওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য সাংবাদিক জানিয়েছিলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে এবং কয়েকটি শর্ত মেনে দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিক্রি করা যাবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন।’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) এ সংক্রান্ত নিয়ম সংশোধন করেছে। তবে শুধুমাত্র ভারতে তৈরি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনকেই এ ক্ষেত্রে অনুমোদন দিয়েছে ডিজিসিআই। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, খোলা বাজরে বিক্রি করার জন্য এই দুটি ভ্যাকসিনের দামও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে কয়েকটি প্রক্রিয়া শেষে শর্তসাপেক্ষে মিলবে এই ভ্যাকসিন। যদিও কবে থেকে এবং কী কী শর্ত মেনে বিক্রি করা যাবে, তা এখনও জানানো হয়নি।
এদিকে পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল ড্রাগস অ্যান্ড ক্লিনিকাল ট্রায়াল রুলসের আওতায় খোলা বাজারে ভ্যাকসিন বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী, খোলা বাজারে বিক্রির আগে আদর পুণাওয়ালার সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) এবং ভারত বায়োটেকের পক্ষে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য জমা দিতে হবে। এ ট্রায়াল এখন চলছে। সেই সঙ্গে দুই টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ভ্যাকসিনেশনের পর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে পিটিআই জানায়, ভ্যাকসিন সহজলভ্য করতে খোলা বাজারে প্রতিষেধকের দাম বেঁধে রাখার জন্য ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিকাল প্রাইজিং অথরিটিকে (এনপিপিএ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিনের দাম বেঁধে দিতে এনপিপিএকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি ডোজের দাম বেঁধে রাখা হতে পারে ২৭৫ টাকায়। সঙ্গে বাড়তি সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১৫০ টাকা যোগ করা যেতে পারে।
যদিও ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের প্রতিটি ডোজের দাম বেসরকারি ক্ষেত্রে পড়ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। যেখানে কোভিশিল্ডের প্রতিটি ডোজের সর্বোচ্চ মূল্য ৭৮০ টাকা। ভারতে এই দুটি ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। কোভিশিল্ড দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের। কোভ্যাক্সিন প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে অনুমোদন পেয়েছে ১২ থেকে ১৮ বয়সীদের মধ্যেও।