অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির অভিযোগ দুদকের শিডিউলভুক্ত নয়। প্রতিষ্ঠানটির মানিলন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধের বিষয়টি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দেখবে।
প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরুর চার মাস পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এমন তথ্য জানালেন। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন ইভ্যালি নিয়ে দুদকের তদন্তে অগ্রগতি আছে কি না? জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইভ্যালির বিষয়টি দুদকের শিডিউলভুক্ত নয়। মানিলন্ডারিংয়ের কথা যখন হয়েছিল তখন আমরা অনুসন্ধানে নেমেছিলাম। এখন মানিলন্ডারিংসহ ইভ্যালির বিষয়টি অন্যান্য সংস্থা দেখবে।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় ই-ভ্যালির বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুলিশের সিআইডির। এটা তারা দেখবে।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার অনেকটা একই রকম ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, ইভ্যালি নিয়ে শুধু আমরা কাজ করি না। অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য সংস্থাগুলো তাদের তদন্তে অগ্রগতি কিংবা যে পদক্ষেপ নেবেন, সেগুলোও আমরা অনুসন্ধানের স্বার্থে আমলে নেব। মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ কিংবা জনগণ বা রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি কতটুকু হয়েছে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
গত ৪ জুলাই ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদকসহ চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর পরপরই দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালামের সমন্বয়ে টিম গঠন করে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি।
গত ৯ জুলাই দুদকের অনুসন্ধান টিমের সুপারিশের ভিত্তিতে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মো. রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এর আগে অপর একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইভ্যালি ও তার মালিকদের ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইল, অডিট রিপোর্ট, ইভ্যালির নিবন্ধিত মার্চেন্ট তালিকা, পেন্ডিং অর্ডারের তালিকা ও ব্যাংক হিসাব লেনদেন সংক্রান্ত বেশকিছু রেকর্ডপত্র জুলাই মাসে সংগ্রহ করে দুদক। এসব যাচাই-বাছাই শেষে দ্বিতীয় দফায় গ্রাহকের দায়-দেনাসহ ব্যবসার যাবতীয় নথিপত্র চেয়ে গত ২২ আগস্ট ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায় দুদকের অনুসন্ধান টিম।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা।
ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মো. রাসেল বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।