বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্টের একক কোম্পানি বেঞ্চ বোর্ড গঠন করে আদেশ দেন
বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে চার সদস্যের বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন চেয়ে করা এক আবেদনে গত সোমবার (১৮ অক্টোবর) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্টের একক কোম্পানি বেঞ্চ অন্তবর্তীকালীন এ আদেশ দেন।
নতুন বোর্ড গঠন করে সদস্যদের সম্মানিও ঠিক করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে তাদের কার্যপরিধি এবং সম্মানি নির্ধারণ করে দেন উচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইভ্যালি পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠনের অভিমত ব্যক্ত করেন। আদালত সেদিন বলেন, কোম্পানির দুজন সদস্যই কারাগারে। কীভাবে বোর্ড মিটিং হবে? বোর্ড মিটিং করতে গেলেও তা করা যাচ্ছে না। বোর্ড মিটিং না করতে পারলে টাকা কোথায় কী আছে, সে বিষয়েও জানা যাচ্ছে না। সাবেক বিচারপতি, সচিব ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসহ একটি বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। বোর্ডের সদস্য করার জন্য সেদিন আদালত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব করতে বলেন। এরপর আদালত এই বোর্ড গঠন করে দেন।
পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী প্রতি বোর্ড মিটিংয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক বার্ষিক সাধারণ সভার জন্য ২ লাখ টাকা সম্মানি পাবেন।
বোর্ডের সদস্য সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ এবং এফসিএ ফখরুদ্দিন আহমেদ প্রতি বোর্ড মিটিংয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা করে এবং প্রত্যেক বার্ষিক সাধারণ সভার জন্য ১ লাখ টাকা করে সম্মানি পাবেন।
বোর্ডের অপর সদস্য ও এমডি অতিরিক্ত সচিব (ওএসডি) মাহবুব কবীর সরকারের কাছ থেকে বেতন এবং অন্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন (অবসরের পূর্ব পর্যন্ত)। তবে অবসরে যাওয়ার পর সবশেষ সরকারের কাছ থেকে পাওয়া বেতন অনুযায়ী ইভ্যালি তাকে বেতন নেবেন।
প্রতিষ্ঠান অবসায়নের আবেদনের পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন আদেশের পর জানান, হাইকোর্ট ইভ্যালি কোম্পানি লিমিটেডের নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য সাবেক একজন বিচারপতিকে প্রধান করে ৪ সদস্যের বোর্ড গঠন করেছেন। আগামী ধার্য তারিখে বোর্ডকে কোম্পানিটির ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।
গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ইভ্যালি পণ্য সরবরাহ করছে না-এমন অভিযোগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশান থানায় আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহকের মামলা দায়েরের পরদিন বিকালে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে দু’জনই কারাগারে। এরই মধ্যে ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টের কোম্পানি আদালতে আবেদন করেন ইভ্যালির গ্রাহক ফরহাদ হোসেন। এতে ইভ্যালি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনেরও আবেদন জানান।
এ আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। এ জন্য একটি নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে সেদিন আদালত ইভ্যালির সব নথিপত্র ১১ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ইভ্যালির সব নথি হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর বোর্ড গঠনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিন সাবেক সচিবের নাম হাইকোর্টে পাঠায়।
ইভ্যালির দাবি অনুযায়ী তাদের নিজস্ব সম্পদ ১২১ কোটি টাকা হলেও গ্রাহক এবং সরবরাহকারীদের কাছে ইভ্যালির ১ হাজার কোটি টাকার বেশি দেনা রয়েছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি অগ্রিম পেমেন্টে টাকা গ্রহণ করে, ওয়েবসাইটে বিশাল ছাড় এবং ৭-৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদেরকে প্রলুব্ধ করে। দাবিকৃত ডেলিভারির সময় পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও অনেক ভোক্তা এখনও তাদের অর্ডারকৃত পণ্য পাননি।
পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ার পর গ্রাহকদের পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে চেক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইভ্যালির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ না থাকার কারণে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চেকগুলো বাউন্স হয়ে যায়।
ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল এবং কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও চেক জালিয়াতির একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর এই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।