বরিশালের এয়ারপোর্ট থানাধীন বিল্ববাড়ী এলাকা থেকে তিন ই-কমার্স প্রতারককে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন বিএমপি কাউনিয়া থানাধীন কাগাশুরা ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোসা. শাহিনুর বেগম (৪৩), তার স্বামী আমিনুল ইসলাম সুমন মোল্লা (৩৬) ও তাদের ছেলে শাহারিয়ার ইসলাম শাকিল (১৭)।
বুধবার দুপুরে বিএমপি এয়ারপোর্ট থানায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তর মো. জাকির হোসেন মজুমদার এই তথ্য জানিয়েছেন।
জাকির হোসেন আরও জানান, বরিশালের কাউনিয়া থানার কাগাশুরায় বারেক শেখ সুপার মার্কেটে ‘বন্ধু জন ফার্নিচার মেলা অ্যান্ড ভ্যারাইটিজ স্টোর’ নামে একটি দোকান খুলে মোসা. শাহিনুর বেগম, তার স্বামী আমিনুল ইসলাম সুমন মোল্লা ও তাদের ছেলে শাহারিয়ার ইসলাম শাকিল। গত ১ বছর যাবত ফার্নিচার, গ্লোসারি পণ্য কম মূল্যে অনলেইনে কিস্তির মাধ্যমে দেবে বলে মানুষকে প্রলোভন দেখায়। এই প্রলোভন দেখিয়ে এই পর্যন্ত প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ মানুষের কাছ থেকে সপ্তাহে ২০০ টাকা, আবার কারো কারো কাছ থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে দু একজনকে তারা কিছু পণ্য দেন। বাকিদেরকে আর কোনো পণ্য না দেওয়ায় গ্রাহকরা তাদের কাছে পণ্য অথবা টাকা ফেরত চান। গ্রাহকদের কাছ থেকে এসব কথা শোনার পরে গত তিন মাস যাবত তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।
তিনি বলেন, এভাবে গত ১ বছরে জনগণের কাছ থেকে পণ্য দেওয়ার নাম করে তারা আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা জনগণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য টাকার রশিদ দিত। কিন্তু তাদের টাকা নেওয়ার আইনত কোনো ভিত্তি ছিল না। এ সবই ছিল তাদের কৌশল মাত্র। তারা জালিয়াতি ও প্রতারণার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তর মো. জাকির হোসেন মজুমদার জানান, এটা হচ্ছে ই-কমার্সের মিনি ভার্সন। তারা মানুষের কাছে গিয়ে বলতো কোনো জিনিসের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করতে না পারলে তাদের কাছে অল্প অল্প করে অর্ধেক মূল্য জমা দিয়ে মালামাল নিতে পারবেন এবং বাকি মূল্য মালামাল নেওয়ার পর আবার অল্প অল্প করে কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবেন। আরও বলে, ৫ হাজার টাকা জমা হলে ১ লাখ টাকা লোন নিতে পারবেন।
তাদের এসব কথায় বিশ্বাস করে বিএমপি এয়ারপোর্ট থানাধীন কাশীপুর ইউনিয়নের পূর্ববিল্ববাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মো. ইউসুফ হাওলাদারের স্ত্রী লাইলী আক্তার প্রতিদিন ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৩০ টাকা করে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫৫০ টাকা জমা দিয়েছেন। এখন তাকে পণ্য বা টাকা ফেরত না দেওয়ায় তিনি বাদী হয়ে এই তিন জনের নামে একটি প্রতারণা ও আত্মসাতের মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া আরও অনেক ভুক্তভোগী আছেন যারা আরও মামলা দিতে চাচ্ছেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মোসা. শাহিনুর বেগম, তার স্বামী আমিনুল ইসলাম সুমন মোল্লা ও তাদের ছেলে শাহারিয়ার ইসলাম শাকিলকে কাশিপুরের পূর্ববিল্ববাড়ি থেকে স্থানীয়রা তাদের আটকে রেখে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাদেরকে আটক করে নিয়ে আসে।
উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তর জাকির হোসেন মজুমদার জানান, আটক আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে এই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এর মধ্য থেকে শাহারিয়ার ইসলাম শাকিলকে সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। বাকি দুই জনকে আদালতে পাটানো করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএমপি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুল করিম ফজলু, কাউনিয়া ও এয়ারপোর্ট থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল ইসলাম শামীম এবং এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ কমলেশ চন্দ্র হালদার।