মেহেরপুরের সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের হবিবর রহমান দুইবিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেন। বাজারে চাহিদা না থাকায় উন্মুক্ত করে দিয়েছেন জমির কপি। কেউ গবাদিপশুর খাবার হিসাবেও নিচ্ছে না সেই কপি। ফলে জমিতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। দৈনিক যুগান্তরের মাধ্যেমে জানা যায়, হবিবরের মতো মেহেরপুর জেলার কপিচাষিদের অনেকেই কপিচাষের জমি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। জেলায় অন্তত দুই কোটি টাকার কপি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
মেহেরপুরে বাঁধাকপি (পাতাকপি) কেনার কোনো ক্রেতা নেই। কয়েকশ’ বিঘা জমিতে কপি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। গবাদিপশুকেও কেউ খাওয়াতে চাচ্ছে না।
কপিচাষিরা জমি থেকে কপি কেটে অন্যকোথাও ফেলতে পারছে না সাধারণ মানুষের বাধার মুখে। কারণ কপি ফেলে দিলে পচে সেখান থেকে গন্ধ ছড়াবে। বাধ্য হয়ে কপিচাষিরা জমিতেই লাঙ্গল দিয়ে কপি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে।
রোববার সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের কপিচাষি হবিবর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। কপির জমি দেখিয়ে বলেন, বাজারে কপিকেনার কোনো ক্রেতা নেই। যদিবা মেলে জমি থেকে কপি সংগ্রহের টাকা ফিরে আসে না।
গবাদিপশু অতিরিক্ত বাঁধাকপি খেলে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। এই কারণে গবাদিপশু পালনকারীরাও পশুখাদ্য হিসাবে কপি নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তিনি জমি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তার পরেও কেউ কপি না নেওয়াতে জমিতেই কপি শুকাচ্ছে।
জেলার প্রতিটি গ্রামের কপিচাষিরা এবার কপিচাষ করে বিপাকে পড়েছেন। স্মরণকালে এমন বিপর্যয় দেখা যায়নি বলে কপিচাষিদের অভিযোগ।
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় সবজির ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় বাজার থেকে অন্য জেলাগুলোতেও চাহিদা থাকলেও চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। জেলায় কাঁচা পণ্য সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন স্বল্প সময়ের মধ্যেই জেলাতে একটি সবজি সংরক্ষণাগার তৈরির কথা শুনিয়েছেন বিভিন্ন সমাবেশে।
সবজি সংরক্ষণাগার স্থাপিত হলে চাষিদের এতটা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না। সদর উপজেলার উজ্জ্বলপুর গ্রামের জুয়েল বাবু জানান, দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কপিচাষ করতে গিয়ে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
গ্রামের যারা কপিচাষ করেছিল তাদের দু’একজন প্রথমদিকে কপিবিক্রি করে লাভবান হলেও সিংহভাগ চাষি লোকসান দিয়েছে।
বাবুর মতে, কপি থেকে সংরক্ষণযোগ্য খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন হলে বছরে কপির যেমন চাহিদা বাড়বে, মানুষের পুষ্টি চাহিদা জোগাবে এবং চাষিরা কপিচাষে উৎসাহ পাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুরের কীটনাশকমুক্ত ১৪শ’ টন বাঁধাকপি বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। বিদেশের বাজার ধরতে পারলে আগামীতে আর চাষিদের লোকসান গুনতে হবে না।