যেদিকে চোখ যায় সবুজ আর সবুজ, সুবিশাল এ সবুজের মাঝে শোভা পাচ্ছে রসালো তরমুজ। কেউ গাছ থেকে ফলন ছিঁড়ছেন, কেউ ক্ষেতের যত্ন নিচ্ছেন। অন্যদিকে চলছে গাড়িতে তরমুজ উঠানোর কাজ। যা চলে যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তরমুজকে ঘিরে এমন কর্মযজ্ঞ চলছে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন চর সোনাপুর এলাকায়। বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক, ব্যাপারী, পাইকার সবার মুখেই লেগে আছে হাসি।
বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর থেকে জানা যায়, এ জমিগুলোকে অকৃষি ভূমি দেখিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সোনাগাজী সোলার পাওয়ার লিমিটেডের স্বার্থে হুকুম দখলের পাঁয়তারা চলছে।
দখলদারদের ভাষ্যমতে অকৃষি অনাবাদী বলা হলেও এ জমিতেই সোনা ফলাচ্ছে কৃষকরা। তরমুজের পাশাপাশি এ চরে চাষাবাদ হচ্ছে মরিচ, খেসারী, খিরা, বেলি, মুগ ডাল, শিমসহ বিভিন্ন ফসল। চলতি মৌসুমে এ চরের আড়াইশ একর জমি থেকে নূন্যতম ৫ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন স্থানীয় ও পাশের জেলা নোয়াখালীর সুবর্ণ চর থেকে আসা কৃষকরা।
মো. ওলি উদ্দিন নামে এক তরমুজ চাষি বলেন, ৮০ একর জমিতে তারা ১০ জন কৃষক মিলে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তরমুজের চাষাবাদ করেছিলেন। ইতোমধ্যেই ৫৫ লাখ টাকার তরমুজ তারা বিক্রি করেছেন। আরো আনুমানিক ৩০ লাখ টাকার তরমুজ মাঠে আছে।
সুবর্ণচর থেকে আসা তরমুজের ব্যাপারী জসিম উদ্দিন বলেন, এ চরের তরমুজ অন্য এলাকার তরমুজের চাইতে গুণে মানে ভালো। তিনি এখানকার ২০ একর জমির তরমুজ কিনেছেন ২২ লাখ টাকায়। পরিবহনসহ সব খরচ মিলিয়ে এ তরমুজ তিনি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
চট্টগ্রাম থেকে আসা আমির হোসেন নামের আরেক ব্যাপারী জানান, তিনি ২০ একর জমির তরমুজ কিনেছেন ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। এ তরমুজগুলো তিনি চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গিবাজার, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাবেন।
মজিবুল হক নামের স্থানীয় একজন কৃষক জানালেন, তিনি ১৪ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ঠিক মতো সেচের পানি পাওয়ায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। দামও পেয়েছেন ভালো।
হাজী মাবুল হক নামের আরেক তরমুজ চাষি বলেন, গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর এই এলাকায় তরমুজের চাষাবাদ বেড়েছে, আল্লাহর রহমতে ফলনও হয়েছে ভালো।
স্থানীয় কৃষকরা আকুল আবেদন জানান, সোনা ফলা এ জমি যেন অধিগ্রহণ না করা হয়। জমিগুলো অধিগ্রহণ হলে অনেক কৃষকের পেটে লাথি পড়বে। অনেক কৃষক পরিবার না খেয়ে মরবে। শুধু তরমুজ নয় এখানে অন্যান্য ফসলও খুব ভালো হয়। সরকারিভাবে সেচের ভালো ব্যবস্থাপনা থাকায় এ চরের মাটি থেকে বছরে তিনবার ফসল ঘরে তোলা যায়। সবজির পাশাপাশি ধানেরও বাম্পার ফলন হয় এখানে।
তিন ফসলি এ জমিগুলো রক্ষার জন্য প্রতিবাদ ও প্রতিকার চেয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে স্থানীয় ভূমি মালিক ও কৃষিজীবীরা।
ফসলি ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্মারকে ওই মৌজার আনুমানিক ২শ একর অকৃষি জমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে এড়িয়ে সরাসরি ফেনী জেলা প্রশাসককে আদেশ প্রদান করা হয়। এ আদেশের ধারাবাহিকতায় স্থানীয় পৌর ভূমি অফিস ও সোনাগাজীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনাগাজী সোলার পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানির কর্মকর্তাদের দ্বারা অবৈধভাবে বাধ্য হয়ে অকৃষি ভূমির স্থলে তিন ফসলি কৃষি ভূমিকে অধিগ্রহণের জন্য বেআইনিভাবে প্রস্তাব পাঠানো হয়।
ভূমি মালিক ও কৃষকরা আরো জানান, উল্লেখিত ষোল আনা ভূমিই তিন ফসলি। এ ব্যাপারে তারা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান, কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন কোনো ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে ফসলি জমির বিকল্প নেই।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য সবচেয়ে উত্তম। এই এলাকার মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী। সে জন্যই ভালো ফলন হয়েছে। আশা করি আগামী মৌসুমে তরমুজের চাষ আরো অনেক বাড়বে।
সূত্রঃ বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর