ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: শতাধিক কৃষকের প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি, মাটিকাটা বাজারের খান ট্রেডার্স থেকে কেনা বায়ার কোম্পানির এন্ট্রাকল নামের যে ওষুধ পেঁয়াজের জমিতে ব্যবহার করেছেন তা ছিল নকল ও ভেজাল। আর এই নকল ও ভেজাল ওষুধ পেঁয়াজের জমিতে ব্যবহারের কারণেই কৃষকদের সর্বনাশ হয়েছে।
এদিকে প্রাথমিকভাবে নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত সার ও ওষুধ বিক্রেতা আলী আজগার খানকে ইতোমধ্যে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৯ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার ঘাসিয়ারা কমলাপুর এলাকার কৃষকরা প্রখর রোদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজের জমিতে মানববন্ধন করেন। এতে শতাধিক কৃষক অংশ নিয়ে ভেজাল সার ও কীটনাশক বিক্রেতা আলী আজগার খানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
শ্রীপুর উপজেলার ৬ নম্বর কাদিরপাড়া ইউনিয়নের কমলাপুর, ঘাসিয়ারা, মাটিকাটা, গোয়ালবাড়ী ও বিষ্ণুপুর গ্রামের বেশ কয়েকটি পেঁয়াজের জমি ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজে পচন ধরেছে, পেঁয়াজের গাছের উপরিভাগ শুকিয়ে গেছে।
ঘাসিয়ারা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মিল্টন মল্লিক বলেন, ১৬০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। মাটিকাটা বাজারের খান ট্রেডার্সের মালিক আলি আজগার খানের কাছ থেকে এন্ট্রাকল ওষুধ কিনে পেঁয়াজের জমিতে দেওয়ার তিন-চার দিন পরেই আমার জমির পেঁয়াজে পচন ধরে। এখন আমার পুরো ক্ষেতের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে।
মাটিকাটা গ্রামের কৃষক প্রশান্ত বালা বলেন, আবার ৫০ শতাংশ জমির পেঁয়াজ একদম পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আলী আজগার খানের দোকান থেকে ওষুধ কিনে জমিতে দেওয়ার কারণেই এই সর্বনাশ হয়েছে।
আরেক পেঁয়াজ চাষি বাবু মল্লিক আক্ষেপ করে বলেন, ওষুধ ব্যবসায়ী আলী আজগার খানের কাছ থেকে যে ওষুধ কিনে ছিলাম তা মাঠে দেওয়ার কারণে আমার ১০০ শতাংশ জমির পেঁয়াজ পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, আমার ১০০ শতাংশ জমির পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে।
মাটিকাটা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সুজিত বিশ্বাস বলেন, আমি গরিব মানুষ। টাকা-পয়সা ধার করে ৭০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ভেজাল ওষুধ বিক্রেতা আলি আজগার খানের জেল হয়েছে, জরিমানা হয়েছে এক লাখ টাকা। কিন্তু তাতে তো আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না আমাদের যে লোকসান হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ চাই।
কাদিরপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, কৃষকদের যে ক্ষতি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা দোষী ব্যক্তি আলী আজগার খানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
৬ নম্বর কাদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন খান বলেন, আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে এর একটি সুরাহা করা হয়।
জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজের মাঠগুলো পরিদর্শন করেছি। যে ক্ষতি হয়েছে তা আসলে অবর্ণনীয়। নমুনা জোগাড় করে আমরা ঢাকার খামারবাড়িতে পাঠিয়েছি। পরীক্ষার পর সেখান থেকে ফলাফল আসলেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
তিনি আরও বলেন, পোকা দমন করার জন্য ছত্রাকনাশক এন্ট্রাকল ওষুধ ব্যবহারের কারণেই কৃষকদের এই ক্ষতি হয়েছে বলে তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ভেজাল ও নকল ওষুধের বিক্রি করার দায়ে খান ট্রেডার্সের মালিক আলী আজগার খানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে এন্ট্রাকল কীটনাশক কোম্পানির মাগুরা ও শ্রীপুর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মকিতুল্লাহ বলেন, আজ পর্যন্ত আমাদের বায়ার কোম্পানির এন্ট্রাকল ওষুধ ব্যবহারের ফলে পেঁয়াজের কোনো ক্ষতি হয়নি। খবর শুনে আমি ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজের খেত পরিদর্শন করেছি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কৃষকদের কাছে মাটিকাটা এলাকার খান ট্রেডার্স থেকে কেনা এন্ট্রাকল ওষুধের প্যাকেট দেখেছি, সেটি আমাদের কোম্পানির নয়, নকল প্যাকেট।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শ্যামানন্দ কে বলেন, মাটিকাটা বাজারের সার ও ওষুধ ব্যবসায়ী আলী আজগার খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার বাড়ির নকল সার তৈরির কারখানাটি আমরা সিলগালা করে দিয়েছি। তার ওষুধ বিক্রি ও তৈরির লাইসেন্স আমরা জব্দ করেছি।