ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: ‘খেতে সুস্বাদু, দামে কম, সাইজ বড়, ওজন বেশি। যে কিনবে সেই জিতবে। আগে আসলে আগে পাবেন, পরে আসলে ছোট পাবেন।’ এভাবেই মাইকিং করে তরমুজ বিক্রি করছেন মেহেরপুরের শরিফুল ইসলাম। তিনি ১০ বছর ধরে তরমুজ বিক্রির ব্যবসা করেন।
তরমুজ ব্যবসায়ী শরিফুল জানান, কিছু দিন আগে বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫ কেজি ওজনের তরমুজ ৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা কম দাম হাঁকলেও বাজারে তরমুজের ক্রেতা নেই। যারা দূর-দূরান্ত থেকে তরমুজ কিনে হাটবাজারে তুলেছেন তাদের গাড়ি ভাড়াটাও উঠছে না। দেশের বিভিন্ন জেলায় নানা কাণ্ড ঘটানো তরমুজের এখন চাহিদা নেই। বাজারে আম, জাম ও লিচু বিক্রি হওয়ায় তরমুজের ওপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারা। তরমুজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের ছুটতে হচ্ছে গ্রামে গ্রামে। শহরের ওলিগলিতে ক্রেতা ডাকতে হচ্ছে মাইকিং করে।
তরমুজ ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম জানান, আগের চেয়ে এখনকার তরমুজের স্বাদ বেশি। ৫-৬ কেজি ওজনের তরমুজের দাম ৭০-৮০ টাকা। তবুও ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে চলে যান। আগে দাম বেশি থাকলেও প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার পিস তরমুজ বিক্রি করতেন। এখন সারাদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ পিস তরমুজ বিক্রি করা যায়। এতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। এই লাভ থেকে আবার ভ্যান ভাড়া দিতে হচ্ছে।
সাহারবাটি গ্রামের কৃষক ফজলুল হক জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে ব্লাক বেবি জাতের তরমুজের আবাদ করেছিলেন। এক সপ্তাহ থেকে তরমুজ উঠতে শুরু করেছে। পাইকারি ক্রেতা না থাকায় নিজের তরমুজ নিজেই ভ্যানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন। এখন তরমুজের চাহিদা খুবই কম। সারাদিন এক দেড়শ তরমুজ বিক্রি হয়।
গাংনীর মুন্দা গ্রামের কৃষক আহসান হাবিব জনান, তিনি দুই বিঘা জমিতে গোল্ডেন জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন। কিছু তরমুজ বিক্রি করতে পেরেছেন। এখনও অর্ধেকের বেশি তরমুজ জমিতে রয়েছে, কিন্তু চাহিদা নেই।
তিনি আরও জানান, দুই বিঘা জমিতে বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের খরচ দিয়ে তরমুজ চাষে খরচ হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। এখন দাম না পেলে লোকসান হবে।
কৃষকরা জানান, মেহেরপুরে এক সময় ব্যাপক হারে তরমুজের আবাদ হলেও ২০১৫ সালের পর থেকে তরমুজের আবাদ হয় না। ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত রোগে তরমুজের লতা কুঁকড়িয়ে গাছ মারা যায়। ফলে তরমুজের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন কৃষকরা। সেই থেকেই খুলনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। কয়েক বছর ধরে মৌসুমের শুরুতে তরমুজ বিক্রি হয় কেজি দরে। শেষের দিকে এসে তরমুজের চাহিদা কমে যায়।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামসুল আলম জানান, জেলায় বেশ কয়েক বছর তেমন তরমুজের আবাদ হয় না। শুধুমাত্র গাংনী উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে তৃপ্তি, গোল্ডেন, ব্লাক বেবি, প্রতিমা ও বাংলালিংক নামের কয়েকটি জাত বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। কৃষকরা এসব জাতের তরমুজ আবাদ করেছেন। গেল বছর অনেকেই লাভবান হয়েছেন। এবার শেষ দিকে এসে তরমুজের চাহিদা কমেছে। আবহাওয়া ও জমির উর্বরতার বিষয়টি লক্ষ্য করে তরমুজ আবাদ করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।