ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: অনুকূল আবহাওয়া আর উত্তম পরিচর্যায় চলতি বছরে মানিকগঞ্জে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও পাইকারি বাজারে আলুর দাম কম। এতে লোকসানের শঙ্কায় আছেন জেলার আলুচাষিরা।
চলতি মৌসুমে এক কেজি আলুর বীজ কিনতে কৃষকের খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। জমি তৈরি থেকে শুরু করে সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরিসহ এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই লাভ দূরে থাক, খরচ উঠবে কি না, তা নিয়েই রাজ্যের হতাশায় চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রমিক নিয়ে জমি থেকে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনেকে জমি থেকেই আলু তুলে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার অনেক কৃষক আলু তুলে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। আলু চাষে কৃষক লাভবান না হলেও পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে আলুর পাইকারি দাম নির্ধারণ করে দিলে লাভ না হলেও উৎপাদন খরচ তুলতে পারবে বলে জানান কৃষকরা।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছর জেলায় ১ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয় এবং আলুর উৎপাদন হয় ৩৭ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করেছেন কৃষকরা, যা গত বছরের চেয়ে ১২ হেক্টর কম। করোনাকালীন গতবার কৃষকরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছেন ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে। তবে এ বছর আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু ৭ থেকে ৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে বিনিয়োগের টাকা তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন জেলার প্রায় দেড় হাজার আলুচাষি, মৌসুমি আলু ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম কম থাকায় কৃষক আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে জানায় কৃষি অধিদফতর।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বারাহিরচর এলাকার কৃষক নুরু মিয়া বলেন, এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছি। জমিতে হাল চাষ, সার, বীজ, কীটনাশন ও শ্রমিকের মজুরি নিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হয়েছে। তবে জমি থেকেই ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিচ্ছি। এবার আলুতে লোকসান হবে।
ঘিওর উপজেলার চরবাইলজুরী গ্রামের কৃষক মো. স্বরফ আলী বলেন, নিজের জমি না থাকায় অন্যের দুই বিঘা জমি কটে (বর্গা) নিয়ে এবার আলুর আবাদ করেছি। আলুর ফলন ভালো হলে কী হবে, বাজারে তো আলুর দাম কম। কৃষকরা আলুর আবাদ করে লাভবান না হলেও খুরচা ব্যবসায়ীরা ঠিকই আলু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। সরকারিভাবে পাইকারি বাজারে ১৫ টাকা কেজি আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলে কৃষকরা চালান তুলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন এই কৃষক।
সদর উপজেলার জাগীর বন্দর সবজির আড়তের পাইকার ব্যবসায়ী মো. লাল মিয়া বলেন, এ বছর চাহিদা অনুযায়ী আলুর উৎপাদন বেশি। এ কারণে আলুর চাহিদা কম থাকায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছি ১০ থেকে ১১ টাকায়। আর কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি আলু কেনা হয়েছে ৭ থেকে ৮ টাকায়। আড়ত থেকে আলু কিনে খুরচা ব্যাপারিরা স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছেন ১৫ থেকে ২০ টাকা। তবে পাইকারি ব্যবাসয়ীরাও এবার আলুতে তেমন লাভ করতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, চলতি মৌসুমের আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরু দিকে আলুর উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি হওয়ায় পাইকারি বাজারে দাম কম পাচ্ছেন। এতে জেলার আলুচাষিরা কিছুটা লোকসানের শঙ্কা করছেন।
এবার প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ২০ টন আলু উৎপাদন হবে। সে হিসাবে এ বছর জেলায় ৩১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন আলুর উৎপাদন হতে পারে। এক কেজি আলু উৎপাদনে প্রত্যেক কৃষকের খরচ হয়ে সোয়া ৮ টাকার মতো আর পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে। তবে উৎপাদিত আলু এখনই বিক্রি না করে মজুত করে পরে বিক্রি করলে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।