ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: প্রতি বছরই রংপুর অঞ্চলে আলুর উৎপাদন ভালো হয়। কিন্তু বছরের পর বছর হিমাগারে আলু সংরক্ষণ, ন্যায্য দাম না পাওয়াসহ রয়েছে নানা অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি খরচের বোঝা নিয়ে এবারো শুরু হয়েছে আলু চাষ। তবে শীত আর ঘন কুয়াশা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে কৃষকদের।
চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৯৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে বিভিন্ন জাতের ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন আলুর উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। ভালো ফলন পেতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে শীতের কারণে আলুর ফলন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। কয়েকদিন ধরে রংপুর অঞ্চলে শীতের প্রকোপের পাশাপাশি ঘন কুয়াশা পড়ছে। এই কুয়াশা আলুর জন্য ক্ষতিকর। এতে লেডব্লাইড রোগের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
রংপুর অঞ্চলে চলতি মৌসুমে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হচ্ছে। কিছুটা বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাষিরাও নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে খেতের পরিচর্যায় নেমে পড়েছেন। আমন মৌসুমে বাম্পার ফলন হলেও গত মৌসুমে আলুতে খুব একটা লাভ করতে পারেননি আলুচাষিরা। এখনো অনেক হিমাগারে আলু সংরক্ষিত রয়েছে। ঠান্ডা আবহাওয়া আলু চাষের জন্য উপকারী হলেও কুয়াশা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে কারণে গত কয়েক দিনের শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে উদ্বিগ্ন কৃষক।
আবহাওয়া অধিদফতরের দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে এ অঞ্চলে। আর এমনটা শুরু হলে আলুচাষিদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়বে।
রংপুর নগরীর ময়নাকুটি এলাকার আলুচাষি মমিন মিয়া ও খোদা বকস মিলে এবার ৮০ শতক জমিতে আলু চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হবে বলে তাদের বিশ্বাস। তারা জানান, এখন সারের দাম বেশি। আবহাওয়া ভালো নয়। ঘন কুয়াশা আর শীতের প্রকোপ না কমলে লেডব্লাইড রোগের আশঙ্কা রয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ফলন ভালো হলে দামও ভালো পাওয়া যাবে।
পীরগাছা উপজেলার হাউদারপাড় গ্রামের বোরহান কবির জানান, তিনি প্রতি বছরই আলু চাষ করেন। এবার আলুর মৌসুমের শুরুতে বীজ আলু ও সার সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়। তবে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না। কিন্তুু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন তিনি। শুধু তিনি নি, তাদের মতো আরও অনেকেই এমন আশঙ্কার কথা জানান।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এই আবহাওয়া আলুর জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। এটি কাটিয়ে উঠতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চাষিদের উদ্বিগ্ন না হয়ে নিয়মিত ক্ষেত পরিচর্যা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনা খাতুন জানান, চলতি বছর নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে ৬ হাজার ৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০০ হেক্টর উপসি এবং ৪০০ হেক্টরে দেশি জাতের আলু চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হবে।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিগত মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী জেলায় ৯৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন উন্নত জাতের গোল আলু চাষ করা হয়েছিল। এবারো এসব জেলায় একই পরিমাণ জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর, নীলফামারীতে ২২ হাজার ১০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৯ হাজার ২২০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ৬ হাজার ৫৯৫ হেক্টর এবং লালমনিরহাটে ৫ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব জেলার প্রায় ৯৮ ভাগ জমির ৯৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান জানান, এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমান যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তাতে আলুর ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা কম রয়েছে।