দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণ হচ্ছে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত। এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও স্বল্প সময়ে যাতায়াত করতে কিন্তু বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ওপর উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হচ্ছে কয়েক বছর ধরে।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, উন্নয়ন কাজে সমন্বয় না থাকায় সড়কে যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। বৃষ্টির পানি সামান্য জমলে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এজন্য উপযোগী মানের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা দরকার। শুধু ফ্লাইওভার করলেই হবে না। এখন ফ্লাইওভারে যানজটে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সুফল মিলবে না।
যানজটের প্রধান কারণ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী-গাজীপুর অংশ। এই অংশে কয়েক বছর ধরে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কাজ চলাকালে নিচের সড়কের মেরামতের দায়িত্ব প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু তারা সড়ক সংস্কার না করায় বর্ষার পানিতে শত শত খানাখন্দ তৈরী হয়েছে সড়কে। এতে করে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে থেমে যাচ্ছে। প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঢাকার বিমানবন্দর সড়কেও যানজটের প্রধান কারণ বিআরটিসহ একাধিক চলমান প্রকল্প। এ জন্য সমন্বিত যে উদ্যোগের দরকার ছিল তা অনুপস্থিত। বরং নানা অব্যবস্থাপনায় বিমান বন্দর সড়কে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, যানজট কমানোর কোনো পদক্ষেপ বা বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে না করেই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় রাজধানীর উত্তরের জেলাগুলোর মানুষ কয়েক বছর ধরেই ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষায় পানিবদ্ধতায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। বিকল্প আশুলিয়া সড়কেরও বেহাল দশা। বর্ষার আগে সামান্য বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে আশুলিয়া সড়ক। স্থানীয়রা জানান, আশুলিয়ার নিম্নাঞ্চলগুলো ভরাট না করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! একের পর এক নিম্নাঞ্চল ও লেক ভরাট করে নতুন নতুন ভবন ও কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। তাতেই সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক ডুবে যাচ্ছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে যানবাহন আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বৃষ্টির পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় পানিজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী-গাজীপুর অংশের যানজটে প্রভাব পড়ে বিমানবন্দর সড়কসহ পুরো রাজধানীতে। গতকাল দিনভর রাজধানীজুড়ে ছিল ভয়াবহ যানজট। আষাঢ়ের প্রথম দিনে থেমে থেমে বৃষ্টি তার উপর ভয়াবহ যানজটে রাজধানীবাসীর ভোগান্তির অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়।
এক ব্যক্তি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ইসিবি চত্বর থেকে উত্তরা পর্যন্ত (১২.২ কিলোমিটার) রাস্তা পার হতে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট লেগেছে। ভুক্তভোগী আব্বাস আলী বলেন, আমরা আসলে খুবই অসহায়। হাতে অতিরিক্ত নিয়ে বের হওয়ার পরেও সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি না। সরকারের কোনো চিন্তাতেই নেই আমরা এমন কষ্ট করি রাস্তায়। আসলে কিছু বলার নাই।