তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সবকিছু আমাদের হাতের নাগালে থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা সত্যিই খুবই অসহায়। মানবসভ্যতা যতই উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ততই আমরা কিছু অমীমাংসিত সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ছি। তেমনি একটি সমস্যা-জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে বহু কারণ আমাদের সামনে আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা যতটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি মনুষ্যসৃষ্ট। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পলিব্যাগ ও প্লাস্টিক দূষণ।
নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের মোড়কে প্রতিদিনই ব্যবহার করা পলিব্যাগ ও প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ড্রেন-রাস্তাঘাট, মাঠে-ময়দানে, নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবা কিংবা ফসলের মাঠে ফেলা হচ্ছে। বিষাক্ত পলিব্যাগ ও প্লাস্টিক মাটিতে ফেলার দরুন মাটি হারাচ্ছে তার উর্বরতা, ড্রেন ও রাস্তাঘাটে ফেলার দরুন ড্রেনগুলোতে ময়লা পানিনিষ্কাশনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং খাল-বিল, নদী-নালাতে ফেলার দরুন একদিকে নদীগুলো তার নাব্যতা হারাচ্ছে, অপর দিকে খাল-বিলগুলোতে মাছ চাষে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউ ও সূর্যের আলোর প্রভাবে পথিলিন ও প্লাস্টিক পণ্যগুলো ধীরে ধীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। পানি ও খাদ্যের সঙ্গে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক বিভিন্ন জীবের দেহে প্রবেশ করে। একসময় ফুড চেইন বিশেষ করে মাছের মাধ্যমে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া ক্লোরিনযুক্ত প্লাস্টিক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে, যা ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের পানির সঙ্গে মিশে যায়। এভাবে একসময় পানি ও মাছের মাধ্যমে খাদ্যচক্রে ঢোকার মাধ্যমে মানবদেহ চরম বিপর্যয়ে পড়ছে এবং আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
অন্যদিকে প্লাস্টিক ও পলিথিন উৎপানের প্রক্রিয়ায় গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। শুধু তা–ই নয়, পলিব্যাগ কিংবা প্লাস্টিকে মোড়ানো মাছ, মাংস, সবজি ইত্যাদি ব্যবহারে মানবদেহে বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা ওয়েস্ট কনসার্নের জরিপমতে, শুধু রাজধানীর চারপাশের চারটি নদীতে ৩০ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া গেছে। এর অর্ধেকই রয়েছে ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদীতে। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে মানুষের ব্যবহার করা মাস্ক ও গ্লাভসের ৯২ শতাংশ খাল-বিল-নালা হয়ে এসব নদীতে পড়ছে বলেও উঠে আসে জরিপে।
অধিক জনসংখ্যা আর অর্থনৈতিক কারণে দেশের মানুষ পলিব্যাগ ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি করে। সুতারাং সরকারের এ ব্যাপারে টেকসই চিন্তাভাবনা করার বিকল্প নেই। পলিব্যাগ ও প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে সস্তা পরিবেশবান্ধব পণ্য উদ্ভাবন করতে হবে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটজাত দ্রব্যের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের হারানো সোনালি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে সুষ্ঠু, সুন্দর ও বসবাসের যোগ্য বাংলাদেশ গড়তে পলিব্যাগ ও প্লাস্টিক–সংকট সমাধানের বিকল্প নেই। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি যদি আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হই, তাহলেই প্রচ্ছন্ন পলিব্যাগ ও প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।