বাংলাদেশে প্রতিবছর কি পরিমান ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। বেসরকারি সংস্থা Environment and social development organisation (ESDO) এর গবেষণা প্রতিবেদন “ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা- ২০১৮” তে বলা হয়েছে বাংলাদেশে বছরে তিন মিলিয়ন মেট্রিক টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আবার বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (BMPIA) এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশে ১ লক্ষ ৪২ হাজার টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়েছিল । এর মধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমে তৈরি হয় এক হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার মতে ২০২১ সালে দেশে ১ হাজার ১৬৯.৯৮ টন মোবাইল ই-বর্জ্য তৈরি হবে (বাংলা ট্রিবিউন)।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফেকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের (BEMMA) মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩.২ মিলিয়ন টন ইলেকট্রনিক সামগ্রী ব্যবহৃত হয় । এর মধ্যে ২০-৩০ শতাংশ রিসাইকেল হয় এবং বাকিটুকু যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ই-বর্জ্যে পরিণত হয়।
ধারনা করা হয় বাংলাদেশে তিনভাবে ই-বর্জ্য সৃষ্টি হয়। প্রথমত অভ্যন্তরীণ গ্রাহকদের ব্যবহার ও মেয়াদ শেষে নিক্ষেপ । দ্বিতীয়ত বিপুল পরিমাণ প্রবাসী শ্রমিকদের মাধ্যমে দেশে আনিত ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যাদি এবং তৃতীয়ত উন্নত দেশগুলো থেকে চোরাই পথে পাচার হয়ে আসা ব্যবহৃত ও পুরানো ডিভাইস।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক জুন’ ২০১৯ এ প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে , দেশের বর্তমান জনসংখ্যা
১৬ কোটি ৪৬ লাখ। আর ডিসেম্বর’ ২০১৯ এ প্রকাশিত BTRC এর প্রতিবেদন বলছে দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার। অর্থাৎ বলা যায় দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি বছর ২০-২৫ শতাংশ মোবাইলের ব্যবহারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সেই হিসেবে দেশে শুধুমাত্র মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের থেকেই একটা বিশাল পরিমাণ ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে।
পরিত্যক্ত এসব বর্জ্য ঢাকার নিমতলী, ইসলামপুর, চক বাজার, বাবুবাজার, এলিফ্যান্ট রোড ও ধোলাইখালে, এবং চট্টগ্রামের সিডিএ মার্কেট, কক্সি মার্কেট, আইস ফ্যাক্টরি রোড, ভাটিয়ারী ও কদমতলীতে এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানের আবাসিক এলাকাতে ও রিসাইক্লিং করা হয়। অনানুষ্ঠানিক খাতে গড়ে ওঠা এসব রিসাইক্লিং কেন্দ্রে আইন-কানুন ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের তেমন কোন বালাই নেই। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে এসব কেন্দ্রে কাজ করে প্রায় ৫০ হাজার শিশু কিশোর।
এই কাজে জড়িত প্রায় ৮৩ শতাংশ শিশু-কিশোর কিডনি ও ফুসফুস ড্যামেজ, উচ্চ রক্তচাপ , মানসিক বিষন্নতা, নার্ভ সিস্টেমের দুর্বলতা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, পঙ্গুত্ব সহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত। কিন্তু এতদসত্ত্বেও ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা নেই বললেই চলে।