ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: রাজধানীর বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের কম সময়ে তিন দফা বেড়ে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৭০ টাকায় উঠেছে পেঁয়াজ। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ প্রায় শেষ হয়ে আসায় এই দাম বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, বাজারে এখন দেশি যে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তা মুড়ি কাটা পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজের সরবরাহ এখন প্রায় শেষের পথে। ফলে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কম। তবে মেহেরপুরের পেঁয়াজ (আকারে বড়) আসতে শুরু করেছে বাজারে। এছাড়া ১০-১২ দিনের মধ্যে হালি পেঁয়াজও বাজারে আসবে। তখন পেঁয়াজের দাম কমে যাবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, বাজারে যখন মুড়ি কাটা পেঁয়াজ ভরপুর ছিল তখন দাম বেশ কম ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে থাকে। ফলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এক দফা পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৬০ টাকা কেজি হয়। অবশ্য তখন এক সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম আবার কমে ৪৫ টাকায় নেমে আসে।
এ পরিস্থিতি চলতি মাসের শুরুতেই ফের পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। প্রথম দফায় কেজিতে ১৫ টাকার মতো বেড়ে ৬০ টাকা হয়। শুক্রবার পর্যন্ত এ দামেই রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারগুলোতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। তবে গত দুদিনে দাম আরও দুই দফা বাড়ে। এতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ৬৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছেন পেঁয়াজ।
খুচরা বাজারের পাশাপাশি পাইকারিতেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিছুদিন আগে ৩৬-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন পাইকারিতে ৬০-৬২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ার কারণে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ছে। কোনো কিছুতে নিয়ন্ত্রণ নেই। শুধু পেঁয়াজ নয়, চাল-ডাল, তেল-চিনি সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম। নিত্যপণ্যের এমন অস্বাভাবিক দামের কারণে বেশ কষ্টে রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আশরাফ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছুদিন আগেও পেঁয়াজের কেজি ৪০-৪৫ টাকা কিনেছি। এখন পাইকারি বাজারেই ৬২ টাকার নিচে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। মহল্লার ব্যবসায়ীরা ৭০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। কি এমন হয়ে গেল হুট করে পেঁয়াজের এমন দাম বেড়ে গেল?
তিনি বলেন, শুধু পেঁয়াজ না, বাজারে সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম। সয়াবিন তেলের কেজি ১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বোতলের তেল মহল্লার দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না। বড় বড় মার্কেটেও এখন বোতলের ৫ লিটার তেল নেই। আসলে যে যেমন পারছে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে। দেশটা যেন মগের মুল্লুক হয়ে গেছে।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজিপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, কিছুদিন আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি করেছি। পাইকারিতে দাম বাড়ায় শুক্রবার ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। গত দুদিনে পাইকারিতে দাম আরও বেড়েছে। ফলে আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। যে দামে পেঁয়াজ কিনে এনেছি তাতে ৭০ টাকার নিচে বিক্রি করার উপায় নেই।
রামপুরার ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, আজ পাইকারি বাজার থেকে ৬২ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনে এনেছি। সেই সঙ্গে গাড়ি ভাড়া ও দোকান ভাড়া যোগ করলে প্রতিকেজি পেঁয়াজের জন্য আমাদের খরচই পড়ে যাবে ৬৭-৬৮ টাকা। এই পেঁয়াজ ৭০ টাকার নিচে কি করে বিক্রি করবো?
হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়া বা কমা আমাদের হাতে নেই। পাইকাররাই ভালো বলতে পারবেন কেন দাম বাড়ছে। তবে আড়তে গিয়ে যেটা শুনছি, বাজারে এখন পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এ কারণে দাম বাড়ছে। তবে বাজারে এখন মেহেরপুরের পেঁয়াজ এসেছে। এই পেঁয়াজের দাম কম। মেহেপুরের পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান মোস্তফা বলেন, মুড়ি কাটা পেঁয়াজ প্রায় শেষ, এ কারণে এখন পেঁয়াজের দাম একটু বেশি। আমরা পাইকারিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছি ৬০-৬২ টাকা। তবে কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। কারণ ১০-১২ দিন পরই হালি পেঁয়াজ বাজারে আসবে।
তিনি বলেন, বাজারে মেহেপুরের পেঁয়াজ চলে এসেছে। এই পেঁয়াজ আমরা ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী মো. বাবু পেঁয়াজের দামের বিষয়ে বলেন, সামনে পেঁয়াজের আর দাম বাড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে হালি পেঁয়াজ চলে আসবে।