নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতটা দূরদর্শী নেতা ছিলেন তার প্রমাণ ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। একটি ভাষণ, একটি জাতির মুক্তির সনদ। যে ভাষণে এখনও উজ্জীবীত হয় বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ।
একদিকে জাতিকে স্বাধীনতার পূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়া, অন্যদিকে লক্ষ্য বিচ্ছিন্নতাবাদি হিসেবে যাতে চিহ্নিত না হন। এই দুটি বিষয়ের ভারসাম্য রক্ষা করেই ১৮ মিনিটের এক কালজয়ী ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকার রাজপথ। দেশের মানচিত্র খচিত পতাকা ওড়ানো, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ ও জাতীয় সংগীত ঠিক করা। দ্রুতই স্বাধীকার আন্দোলন এগিয়ে চলে স্বাধীনতার পথে। দেশের জনগণ তখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধু দিকনির্দেশনার অপেক্ষায়। ৩রা মার্চ পল্টনে ছাত্র সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন ৭ই মার্চে ভাষণেই সব বলবেন।
অবশেষে এলো ৭ই মার্চ, ১৯৭১। রোববার বিকেলে স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল দেশের সব জনস্রোত সেদিন মিলিত হয়েছিল তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। লাখ লাখ মানুষের জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রেসকোর্স ময়দানে যখন উত্তাল জনতার গর্জন চলছে, তখন ৩২ নম্বরে চলছিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নেতাদের আলোচনা। একপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে চাপ দিচ্ছিল সেদিনই স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার। কিন্তু, দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু জানতেন সেই মূহুর্তে কি বলতে হবে।
হৃদয়ের সব আবেগ নিংড়ে পাকিস্তানের শোষণ আর বঞ্চনার কথা রেসকোর্স ময়দানে জনতার সমুদ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বজ্রকণ্ঠে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণ যেন অনবদ্য এক ইতিহাস। মন্ত্রমুগ্ধ জনতা সেদিন তার এই ভাষণ বুকে ধারণ করেই মুক্তির স্বাদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠে।
পৌনে তিনটায় ভাষণ শুরু করলেন বঙ্গবন্ধু। শেষ করলেন ৩টা তিন মিনিটে। ১৮ মিনিটে স্বাধীনতাকামী জাতিকে দিলেন সব নির্দেশনা। ভাষণ শেষ হতেই আবারো স্বাধীনতার পক্ষে শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে রাজপথ।
আজ সোমবার সেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হবে দিনটি। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর কালজয়ী ভাষণগুলোর অন্যতম। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তিকামী জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ওই ভাষণ ছিল এক মহামন্ত্র। একটি ভাষণ কিভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উত্সাহিত করে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘আজ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে রচনা করেছিলেন ১৮ মিনিটের এক মহাকাব্য। গত বছর আমরা এই মহাভাষণের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি। এ বছর আমরা ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর এবং মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। এমনই এক মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধায় প্রথমেই স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন এবং অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ’