আমাদের দেশে কিছু মুনাফালোভী মালিক শ্রেণীর মানুষ তাদের স্বার্থের জন্য শিশু শ্রমিকদের ব্যবহার করে। এবং তাদের এই সকল কাজে মূল সহযোগী কিছু ঠিকাদার। তারা খুব কম বেতনে শিশুশ্রমিকদের ব্যবহার করতে পারে পূর্ণবয়স্ক শ্রমিকদের বিপরীতে।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রী তৈরীর কারখানায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক ও একজন শিশু শ্রমিকের বেতনের
তারতম্য রয়েছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক বেতন পায় ১০-১২ হাজার টাকা এবং একজন শিশু শ্রমিক প্রায়
৫-৬ হাজার টাকা। কিন্তু একজন শিশু শ্রমিককে প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের সমপরিমাণ কাজ করতে হয়। তাদের
কাজ সমান কিন্তু বেতন অর্ধেক।
এই সুবিধা ভোগ করার জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপে সচিব গ্রুপের হাশেম
ফুডস কারখানায় মালিক সেখানে একশত এর বেশি শিশুকে নিয়োগ করেছিল যাদের বয়স ছিল ১২ থেকে
১৭ বছর এর মধ্যে। তিনজন ঠিকাদারের মাধ্যমে তারা এই শিশুগুলোকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিত।
সকলের কাছেই এই রহস্য অজানা ছিল। কিন্তু কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডে যখন ৫২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
তারপর তদন্ত ও ভুক্তভোগীদের মাধ্যমে আমরা এই চিত্র আমরা দেখতে পাই।
![](https://i1.wp.com/www.voktakantho.com/wp-content/uploads/2021/07/collected-for-vk1.jpg?ssl=1)
![](https://i1.wp.com/www.voktakantho.com/wp-content/uploads/2021/07/collected-for-vk2.jpg?ssl=1)
কারখানার মালিক আবুল হাশেম কর্মীদের ওপর চরম অনিয়ম এবং অবহেলা করেছেন। এছাড়া তার ওপর
উঠেছে তালাবদ্ধ করে আটকে রেখে হত্যার দায়। কিন্তু তার স্বপক্ষে যুক্তি মজবুত নয়। তার ছিল না অগ্নিনির্বাপণের
ব্যবস্থা, ছিল ত্রুটিযুক্ত ভবন। এবং তালাবদ্ধ করার ব্যাপারেও তিনি কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি।
জেলা প্রশাসনের কমিটির তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা হাসেম ফুড কারখানার সামনে
ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশের সন্ধান করছেন। এমনকি তারা সিআইডি কার্যালয়ে গিয়ে
নমুনা দিয়েছেন ৪৮ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে ৬৮ জন নমুনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহতের স্বজনদের মধ্যে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের দিনমজুর ফজলুর রহমান বলেন,
গতকালও মর্গে ও হাসেম ফুড এর সামনে ছেলের সন্ধান করেছি। আমার একমাত্র ছেলে হাসনাইন সে তৃতীয় শ্রেণীর
একজন ছাত্র ছিল। আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে আমার ছোট ছেলেকে টার্গেট করে মোতালেব। সে কারখানাতে
আমার ছেলেকে কাজে লাগিয়েছিল আগুন লাগার পর থেকে আমার ছেলে নিখোঁজ। আমার ছেলেকে ৫ – ৬ হাজার
টাকা বেতন দেওয়া হতো।
গ্রাম থেকে আসা শিশু
অন্য একজন শিশু শ্রমিকের মা শিমু আক্তার এর ভাষ্যমতে, ১২ বছর বয়সে আমার শান্তমনিকে কাজে দিয়ে
খুন করেছ। অগ্নিকাণ্ডে ২ দিন আগে হাশেম ফুডস ভবনের চারতলায় কাজ নেয় সে। সেখানে কাজ ঠিক করে
দেয় রিপন নামের একজন ঠিকাদার। সেখানেও নসিলা উৎপাদন করত।
ঝুমা নামের আরেক তরুণী বলেন, তাঁর বোন ইসরাত জাহান তুলিও ঠিকাদার রিপনের অধীনে কাজ করত।
তার বয়স ছিল ১৬। মোতালেব ও সিরাজের মাধ্যমে দুই মাস আগে এই কারখানায় কাজে যোগ দেয়।
মামুন নামের একজন শ্রমিক বলেন, বিভিন্ন ইউনিটে প্রায় শতাধিক জনের মতো শিশু শ্রমিক কাজ করতো তাদের
বেতন ৫-৬ হাজার টাকার বেশি ছিল না। বড়দের নিলে দ্বিগুণ বেতন দিতে হয় তাই শুধু শিশুদের নেওয়া হতো। আর
তারা ১০-১২ঘন্টা কাজ করতো।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের শিশু সনদে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের শারীরিক শ্রম এবং ১৮
বছরের কম বয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু হাশেম ফুডস কোন নিয়মের
তোয়াক্কা না করেই ছোট শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দিয়েছে। কিছু ঠিকাদারের মাধ্যমে সেই এই শিশু শ্রমিক
সংগ্রহ করত।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোতালেব, সিরাজুল ও রিপন। মালিকপক্ষ কম বেতনে শিশুদের দ্বারা কাজ
করানোর সুবিধা ভোগ করত। আর এই ঠিকাদাররা শিশু শ্রমিকদের বেতনের একটা অংশ পেত। বহু সময় ধরেই এই
সিন্ডিকেটের কাজ অব্যাহত ছিল।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়,
২০০৬ সালের শিশু সনদে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের শারীরিক শ্রম এবং ১৮
বছরের কম বয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু হাশেম ফুডস কোন নিয়মের
তোয়াক্কা না করেই ছোট শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দিয়েছে। কিছু ঠিকাদারের মাধ্যমে সেই এই শিশু শ্রমিক
সংগ্রহ করত।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোতালেব, সিরাজুল ও রিপন। মালিকপক্ষ কম বেতনে শিশুদের দ্বারা কাজ
করানোর সুবিধা ভোগ করত। আর এই ঠিকাদাররা শিশু শ্রমিকদের বেতনের একটা অংশ পেত। বহু সময় ধরেই এই
সিন্ডিকেটের কাজ অব্যাহত ছিল।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ হাশেম সহ আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করছে।
তদন্ত পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা রিমান্ডে নিয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে রিমান্ডের চার দিন
শেষ হবে বুধবার। সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে আবারও রিমান্ডের আবেদন করব।
প্রশাসনের গঠিত একটি তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের
তদন্ত কমিটিও আলামত সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন,
‘আমরা আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির কারণ বের করতে কাজ করছি।’
সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান এস এস রুমানা আক্তার জানান, ৪৮ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে ৬৮ জন
নমুনা দিয়েছেন ৪৮ জনের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ৩১ জন নারী। সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে ২১ দিন সময় লাগবে।
আরো সংবাদ পড়ুনঃ ফাল্গুনী শপের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই, অতঃপর আলি এক্সপ্রেসও নাম লেখালো!