গত বছরের আগস্টে ফেনী সদরের তাকিয়া রোডে শিপ্রা ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন এক ক্রেতা। মাছের খাবারের বস্তায় ধার্যকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম রেখেছিল ওই দোকান। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ফেনী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোহেল চাকমা অভিযান চালিয়ে সেই অভিযোগের সত্যতা পান। শিপ্রা ট্রেডার্সকে তখন পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুসারে অভিযোগকারীর হাতে আদায় করা জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ১২৫০ টাকা তুলে দেওয়া হয়।
ওই বছরের অক্টোবরে রায়হান ফেরদৌস নামে এক ক্রেতা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মুন ফার্মেসি থেকে একটি অয়েন্টমেন্ট কিনে দেখেন তাঁর কাছ থেকে ৪১ টাকা বেশি রাখা হয়েছে। বিক্রেতা ১১০ টাকা রাখলেও গায়ের মূল্য ৬৯ টাকা। তিনি ক্রয় রসিদসহ অভিযোগ ঠুকে দেন জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্রে। কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখে অভিযোগের সত্যতাও পান। এ ঘটনায় ওষুধের দোকানটিকে জরিমানা করা হয় পাঁচ হাজার টাকা। অভিযোগকারী পান ১২৫০ টাকা।
এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে কিশোরগঞ্জের চরশোলাকিয়ার ব্যাংক কর্মকর্তা রাশেদুর রহমানের এবং রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মেহেদি হাসানের।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে। প্রতারিত হয়ে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমছে। পণ্য কিনে প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করছেন অনেকেই। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো আগের তুলনায় সচেতন হয়েছে। একই সঙ্গে ভোক্তারাও তাঁদের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো সচেতনতা আসবে মানুষের মাঝে। কারণ দায়ের করা অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ধারা ৭৬(৪) অনুযায়ী আদায় করা জরিমানার ২৫ শতাংশ তাত্ক্ষণিকভাবে অভিযোগকারীকে দেওয়া হয়। এটি করা হয়েছে যাতে ভোক্তারা উৎসাহিত হন। তাঁদের দুই দিক থেকেই লাভ। সমস্যার সমাধান পান, সঙ্গে অর্থও।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সাধারণত নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা, ওজনে কম দেওয়া, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য ও ওষুধ বিক্রি করা, সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করা, নকল পণ্য বিক্রি করাসহ নানাভাবে প্রতারিত হয়ে ভোক্তারা অভিযোগ করেন। ২০০৯ সালে অধিদপ্তর কার্যক্রম শুরু করার পর অভিযোগ এসেছিল ১৭৯টি। সব মিলিয়ে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৮০১টি অভিযোগ পেয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে ছয় হাজার ৭৪৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় চার কোটি ৭০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ৬৪৫ জন অভিযোগকারী পেয়েছেন এক কোটি ১৬ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে ছয় হাজার ৮২৭টি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ভোক্তারা। এর মধ্যে ৬৮০০টির নিষ্পত্তি করে ৪২৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে ৩৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই টাকা থেকে ৪৮০ জন অভিযোগকারীকে আট লাখ ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়া হয় ২৫ শতাংশের নিয়ম অনুসারে।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই শুধু নয়, বাজার অভিযানের মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ন হয় এমন অপরাধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে অধিদপ্তর। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে ৯ হাজার ৮৫১টি বাজার অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ১৬ হাজার ৯৫৮টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অপরাধে জরিমানা করা হয়, যার পরিমাণ ১০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর আগের বছর ১২ হাজার ৩৫১টি বাজার অভিযানে ২২ হাজার ২৪৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজার অভিযান ছিল সাত হাজার ৩৪৩টি, জরিমানা করা হয় ১৯ হাজার ২৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে। আদায় করা হয় ১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
কিভাবে অভিযোগ করবেন
দায়ের করা অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে। ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েবসাইট ইত্যাদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে অভিযোগ দিতে হবে। অভিযোগের সঙ্গে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রসিদ সংযুক্ত করতে হবে। অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম, মা-বাবার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল ঠিকানা (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ধারা ৭৬(১) অনুযায়ী, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হতে পারেন এমন যেকোনো ব্যক্তি অভিযোগ করতে পারেন।