অনলাইন শপিং নিতান্তই আরামদায়ক এবং একইসাথে লাভজনক হলেও প্রতারণা কিংবা হয়রানির কারনে
সেই আরাম মূল্যহীন হয়ে যায়। অনলাইনে কেনাকাটার অন্যতম শীর্ষ প্লাটফর্ম দারাজ। কিন্তু ভোক্তা অধিকার
সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমেও অনলাইন শপ দারাজের বিরুদ্ধে
অভিযোগের পাহাড় জমেছে।
দারাজ একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং লজিস্টিক কোম্পানি। বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মাধ্যমে
বিক্রির প্রচার চালিয়ে থাকে দারাজ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোন, ইলেকট্রিক জিনিসপত্র, কম্পিউটারের
যন্ত্রপাতি, অরগানিক ফুড, বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জামা-কাপড় এমনকি
দেশি বিদেশি পণ্য সহ আরও অনেক কিছুই পাওয়া যায়।
অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ। প্রতিদিন নতুন নতুন অভিযোগের
নমুনা। হয় সেটা ডেলিভারি নিয়ে নয়তো পণ্যের মান নিয়ে অথবা সঠিক পণ্য দেওয়া নিয়ে। এমন ধরনেরই
অভিযোগ করেছে দারাজের পণ্যে গুণগত মানের বিরুদ্ধে ধানমন্ডির সেলিম সামাদ।
ভোক্তভোগী সেলিম সামাদ জানান, দারাজ থেকে অর্ডার করা বেশিরভাগ পণ্যই ত্রুটিপূর্ণ এবং এর ওয়ারেন্টি
নেই। তাদের ফেরত নীতি চতুরতার সাথে তাদের পক্ষে লেখা হয়, গ্রাহকদের নয়। তিনি একটি KM-730
পুরুষদের জন্য রিচার্জেবল ওয়্যারলেস হেয়ার ট্রিমার – রেড “১৭ জুন 555 টাকা দিয়ে অর্ডার করেছিলেন।
পণ্যটি হাতে পাওয়ার পর তিনি দেখেন যে, শেভার/ট্রিমার ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং তিনি এই বিষয়ে দারাজ কর্তৃপক্ষের
নিকট অভিযোগ করেন। তিনি তাদের রিটার্ন হাবে পণ্যটি দিয়ে আসবে বলে জানান কিন্তু সেখানে যেতে যেতে তার
পণ্যটি ড্রপ অফ করার সময় ফুরিয়ে যায় বলে তিনি সেটা ফেরত দিতে পারে নি।
পরে তাকে ইমেইলের মাধ্যমে জনানো হয় যে তার পণ্যটি আর গ্রহন করা হবে না কারণ তিনি সেটা তাদের হাবে
পৌঁছে দিতে পারেননি। এরপর তিনি কথা বিজনেস পয়েন্টেও একটি অভিযোগ পাঠিয়েছিলেন।
তিনি তার অভিযোগে আরও উল্লেখ্য করেন যে , তিনি খুবই অবাক হয়েছেন যে, দারাজ ওয়েবসাইটের কোন ইমেইল
আইডি নেই বা যোগাযোগ করার জন্য একটি হেল্পলাইন নম্বর নেই। অহরহ একই ধরনের ঘটনা ঘটলেও দারাজ এখনও সংশোধন হয়নি বলে গ্রাহকদের ধারণা।
হতে হবে সচেতনঃ
সেলিম সামাদের মতো হাজারো ক্রেতা দারাজ থেকে পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভোক্তা অধিদপ্তর সূত্রে
জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে সাড়ে ৯শ’র বেশি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে কিছু অভিযোগ শুনানির
মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ অভিযোগ এখনও ফয়সালা হয়নি।
গুণগত মানের নিশ্চয়তা নেই এমন যেনতেন কোন অব্র্যান্ডীয় পণ্য অনলাইনে অর্ডার না করাই উত্তম।
শপিং এর আগে সেলারের রেটিং, সঠিক সময়ে ডেলিভারির মাত্রা চেক করে পণ্য অর্ডার করার মনস্থির
করলে এরুপ ভোগান্তি অনেকটাই কমবে।
অনলাইনে যেকোন পণ্য কেনার আগে কোম্পানির ওয়ারেন্টি পলিসি এবং রিটার্ন পলিসি সম্পর্কে সচ্ছ ধারণা থাকা জরুরী।
নির্ধারিত পণ্যের ওয়ারেন্টি কত বছর ও রিটার্ন করার পদ্ধতি কি; এগুলো জেনেই পণ্যটি অর্ডারের সিদ্ধান্তে আসা উত্তম।
পছন্দের পণ্যটি আসল নাকি নকল, সেটা যাচাই করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল দ্রব্যের রেটিং ও রিভিউ।
কোন পণ্যের রেটিং কিংবা রিভিউ আপনার পূর্ববর্তী ক্রেতার সর্বশেষ শপিং অভিজ্ঞতার ফসল,তাই এটা
নিয়ে দুশ্চিন্তা বা সন্দেহের কোন সুযোগ নেই। এই রেটিং অথবা রিভিউ ভালভাবে যাচাই ও বাছাই করে পণ্যটি
সম্পর্কে একটা বিস্তারিত ধারণা নিয়ে পণ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্তে আসতে পারেন খুব সহজেই।
এছাড়াও আমাদের সকলকেই অনলাইনে যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য অর্ডার করে অন্তত কত দিনের মধ্যে ডেলিভারি
পাবো, সেটার ধারণা থাকাটা অবশ্যই দরকার। অর্থাৎ পণ্য ডেলিভারির সময়সীমা জানা না থাকলে ভোক্তার চিন্তারও কোন
সীমা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক না? তাই আমাদের সবাইকে এইদিকে সচেতন হতে হবে।
ভোক্তাদের হয়রানি বন্ধে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাথে কাজ করছে ভোক্তাকণ্ঠ।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, “যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন
ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক
বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন”।
কিভাবে অভিযোগ করবেন:
দায়ের করা অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে। ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েবসাইট ইত্যাদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বা অন্য কোনো
উপায়ে অভিযোগ দিতে হবে। অভিযোগের সঙ্গে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রসিদ সংযুক্ত করতে হবে। অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ
নাম,ঠিকানা,ফোন,ই-মেইল ঠিকানা এবং পেশা উল্লেখ করবেন।
ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন হয় এমন যে কোন অভিযোগে ভোক্তাদের প্রতিকার দিতে পাশে আছে ভোক্তাকণ্ঠ। তাই অভিযোগ করুন এবং ভোক্তাকণ্ঠের পাশে থাকুন।
এইচ এম || ভোক্তাকণ্ঠ
ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত সংবাদ দেখুন
আরো সংবাদ দেখুন: ফাল্গুনী শপের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই, পণ্য, রিফান্ড কিছুই দিচ্ছে না আদিয়ান মার্ট, কচ্ছপ গতিতে ডেলিভারি দিচ্ছে REDX