জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটছে। যা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে বলে দাবি করেছে বিশ্বব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো ‘জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেদনে’ এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস, পানি ও মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে একটি যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাসের সঙ্গে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিশু, প্রবীণের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে বসবাসকারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে দুর্বল দেশের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্যভাবে জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। দেশটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে একটি স্থায়িত্ব তৈরি করেছে এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সুস্পষ্ট প্রভাব উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে। এ জন্য বাংলাদেশের শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। যা উদীয়মান জলবায়ু সংবেদনশীল রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, গত ৪৪ বছর ধরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন দিন গরম বাড়ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে তাপমাত্রা ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, অনিয়মিত আবহাওয়া ২০১৯ সালে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে গড় বৃষ্টিপাতের তিনগুণ বেশি রেকর্ড করা হয়েছিল। একইসঙ্গে মার্চ এবং জুলাইয়ের মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বেশি ছিল।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, বর্ষার তুলনায় শুষ্ক মৌসুমে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২০ শতাংশ কম। তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির জন্য মানুষ ৫.৭ শতাংশ শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর্দ্রতা ১ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ধরা পড়ার সম্ভাবনা ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। আবহাওয়ার ধরন মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। শীতকালে বেশি মানুষ বিষণ্নতায় ভোগে। তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার সঙ্গে উদ্বেগজনিত রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষণ্নতায় পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের সিনিয়র অপারেশন অফিসার এবং সহ-লেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, শক্তিশালী তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু সংবেদনশীল রোগের বিবর্তনকে আরও ভালোভাবে ট্র্যাক করতে পারে। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে সঠিক আবহাওয়ার তথ্য লিপিবদ্ধ করে এবং এটিকে স্বাস্থ্যের তথ্যের সঙ্গে যুক্ত করে সম্ভাব্য রোগের প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস দেওয়া জরুরি। তাহলে জলবায়ুভিত্তিক ডেঙ্গুর প্রাথমিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।