জাতীয় প্রেসক্লাবে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৯ সালে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। পণ্যের দর হ্রাস-বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ গ্যাস ও জ্বালানী তেল,স্বাস্থ্য সেবা, যোগাযোগ, শিক্ষা ও ভোক্তাস্বার্থ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে উঠে আসে। ভোক্তাদের কোন অভিভাবক নেই উল্যেখ করে স্বতন্ত্র মন্ত্রনালয়ের দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।
সদ্য সমাপ্ত ২০১৯ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং পণ্যমূল্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। পূর্ববর্তী ২০১৮ সালে এই বৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৬ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৭ সালে এই বৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে মশলা জাতীয় পণ্য পেঁয়াজ, এলাচি, রসুন এবং আদা ব্যতীত অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বহুলাংশে স্থিতিশীল ছিল। চালের মূল্য ছিল সহনীয় এবং নিম্নমুখী। তবে বছরের শেষে চাল, আটা, ডিম, শাক-সব্জিসহ কিছু পণ্যের মূল্য উর্ধ্বমুখী ছিল। রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্যে থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের তথ্য পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে ক্যাব।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান সাংবাদিকদের সম্মূখে প্রতিবেদন তুলে ধরে, আসন্ন রমজানে পণ্যের দর আরো বৃদ্ধির আশংকা জানিয়ে তিনি সরকারকে নজরদারি, পণ্যের দর ভোক্তাদের হাতের নাগালে রাখা ও দেশে একটি স্বাস্থ্য নগরী গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ক্যাবের জ্বালানী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘যখন-তখন মূল্য বৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, পণ্য বা সেবার মূল্য, জীবন যাত্রার ব্যয় মানুষের কাছে সহনীয় রাখা এটাই মূল কাজ সরকারের এবং রাষ্ট্রের’। তিনি মূল্য স্থিতি তহবিলের গুরুত্ব তুলে ধরে জ্বালানির মূল্য তারতম্য হলে যখন তখন বৃদ্ধি না করে এই তহবিল থেকে সমন্বয় করা আহ্বান জানান।
বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি ও শুল্ক হার নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বাজারে পণ্যমূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার প্রত্যাশা স্বাভাবিক। কিন্তু উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপের ফলে ২০১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশে ভোক্তাদের পণ্য ক্রয়ে ১৪,২২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় এক লক্ষ চৌদ্দ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে। বাংলাদেশে আমদানির ওপর আরোপিত (২০১৭) শুল্ক হার গড়ে ২৫.৬৪ শতাংশ, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের গড় আমদানি শুল্ক হার ছিল ৪.৭৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের এ হার ছিল ১২.১৯ শতাংশ। সরকার স্বাধীনতা পূর্ববর্তী পাকিস্তান আমলে অনুসৃত আমদানি প্রতিস্থাপন নীতি অনুসরণ করে শিল্প খাতকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য শিল্প পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে আসছে। চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব-এশিয়ার দেশসমূহের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক হার হ্রাস এবং রপ্তানিমুখী নীতি অধিক কার্যকর। এ প্রেক্ষাপটে ভোক্তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে আমদানি শুল্কের ব্যাপক হ্রাস যুক্তিযুক্ত হবে খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেল,স্বাস্থ্য সেবা, যোগাযোগ ও শিক্ষার নানা অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ইতিবাচক দিকও উঠে আসে প্রতিবেদনে।