জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত প্রকল্পে সড়কের ৫ কিলোমিটার বাঁক সোজা করতে ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। অনুমোদিত এই ব্যয়ে প্রতি কিলোমিটার বাঁক সোজা করতে ৭ কোটি ১৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা খরচ হবে।
গত ৫ অক্টোবর একনেক সভায় ‘টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া-কাওয়ালীপাড়া-কালামপুর বাস-স্ট্যান্ড সড়ক আঞ্চলিক মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পেই এমন আবদার করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। প্রকল্পটি ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা এবং টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৩৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- টাঙ্গাইল, দেলদুয়ার, নাগরপুর, ধামরাই ও সাটুরিয়া উপজেলার সঙ্গে মানিকগঞ্জ এবং ঢাকার মধ্যে স্বল্পতম সময়ে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা।
অনুমোদিত প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গভিত্তিক পরিমাণ ও ব্যয় বিভাজনে দেখা গেছে, এ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে ৭০৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এ অর্থে ৭৩.৪৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ১৩.২৬ লাখ ঘনমিটার সড়ক বাঁধ প্রশস্তকরণ করতে ব্যয় হবে ৫৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ১২.৮৯ কিলোমিটার পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ ও মজবুত করতে (৫ মিটার থেকে ৭.৩০ মিটার) ৩১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। ৬.৬৫ কিলোমিটার পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ ও মজবুত করতে (৩.০৫ মিটার থেকে ৭.৩০ মিটার) ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। ১৩ কিলোমিটার পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ ও মজবুত করতে (৫.৫০ মিটার থেকে ৭.৩০ মিটার) ৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ৫.০২ কিলোমিটার বাঁক সরলীকরণে খরচ হবে ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
এছাড়া, ৭.০২ কিলোমিটার হার্ড সোল্ডার নির্মাণে ব্যয় হবে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ২৫.৭০ কিলোমিটার ওভারলে/সার্ফেসিং (ডিবিএস) (৭.৩০ মিটার), ৭.০২ কিলোমিটার সার্ফেসিং (১০.৩০ মিটার) এ ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা, ২৮টি বাস-বে নির্মাণে ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, ০.৮০ কিলোমিটার অতিরিক্ত প্রশস্তকরণে ব্যয় হবে ২ কোটি ৩ লাখ টাকা, ১টি ইউলুপ/আন্ডারপাস নির্মাণে ব্যয় হবে ১১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ৪৪৬ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণে (৩১টি) ৫৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ৬টি বক্স কালভার্টেও ৭২ মিটার প্রশস্তকরণে লাগবে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশিদ বলেন, বাঁকা সড়ক সোজা করা ঠিক আছে, কিন্তু যেসব সড়কগুলোর বাঁক সোজা করা হবে সেগুলো একদম চিকন। এ সড়কগুলোর বাঁক সোজার পাশাপাশি প্রশস্তও করা হবে। সে হিসেবে এ ব্যয় যুক্তিসঙ্গত হয়েছে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থই ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হবে। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে মৌজার রেট নিয়ে ভূমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একটা আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। আন্ডারপাস নির্মাণের ১১ কোটি টাকা ব্যয়ও যুক্তিসঙ্গত। আন্ডারপাসে অনেক খরচ হয়।
প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ৭৩.৪৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৫টি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ (মোট দৈর্ঘ্য ৩৮১.১৪ মিটার, ৬.৬৫ কিলোমিটার পেভমেন্ট প্রশস্ত/মজবুতি-করণ (৩.০৫ মিটার হতে ৭.৩০ মিটার প্রস্থ), ১৩ কিলোমিটার পেভমেন্ট প্রশস্ত/মজবুতি-করণ (৫.৫০ মিটার হতে ৭.৩০ মিটার প্রস্থ), ১২.৮৯ কিলোমিটার পেভমেন্ট প্রশস্ত/মজবুতি-করণ (৫.০০ মিটার হতে ৭.৩০ মিটার প্রস্থ), ৯.৪৬ কিলোমিটার আরসিসি রিজিড পেভমেন্ট (১০.৩০ মিটার প্রস্থ) নির্মাণ, ২৫.৭০ কিলোমিটার ওভারলে/সার্ফেসিং (ডিবিএস) (৭.৩০ মিটার প্রস্থ) ও ৭.০২ কিলোমিটার সার্ফেসিং (১০.৩০মিটার প্রস্থ), ১টি গ্রেড সেপারেটেড ইন্টারসেকশন ও ১টি ইউলুপ/আন্ডারপাস নির্মাণ, ৩১টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ (মোট দৈর্ঘ্য ৪৪৬ মিটার), ১৩.২৬ লাখ ঘনমিটার সড়ক বাঁধ প্রশস্তকরণ ও ৫.০২ কিলোমিটার বাঁক সরলীকরণ, ১৩৪৪০ মিটার সসার ড্রেন, ৩১৫৩ মিটার আরসিসি বক্স/কাভার্ড ড্রেন ও ২১০০ মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৩০ হাজার ১০০ বর্গমিটার কংক্রিট স্লোপ প্রটেকশন উইথ জিও-টেক্সটাইল এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর, বৃক্ষরোপণ, সাইন সিগন্যাল, কিলোমিটার পোস্ট, রোড মার্কিং, ট্রাফিক সাইন, নির্মাণকালীন রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে।