চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যাদেশের ভরা মৌসুমেও একের পর এক জটিলতায় স্বস্তি পাচ্ছেন না আমদানি-রপ্তানিকারকরা। ছয়গুণ বেশি জাহাজ ভাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের গুণতে হচ্ছে দশগুণ বেশি কনটেইনার ভাড়া। বৈশ্বিক মহামারী করোনার ফলে সৃষ্ট এই সংকট বর্তমানে ব্যবসায়ীদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা।
আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে কনটেইনার ভাড়া ছিল ২৫০০ ডলার। বর্তমানে সেই ভাড়া দশগুণ বেড়ে ২৫ হাজার ডলারে ঠেকেছে। সেই সঙ্গে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার জাহাজ ভাড়া এখন ১৮ থেকে ২০ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। করোনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাধাপ্রাপ্ত হয়ে জট লেগে যায়। সেই সংকট এখনো কেটে ওঠা যায়নি। বাড়তি জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া দিয়ে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনার খরচ বেড়ে গেছে। ফলে পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে।
মহামারি করোনার কারণে ইউরোপ, চীন, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়েছিল জাহাজ ও কনটেইনার জট। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে সেই সমস্যা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ফলে বিশ্বব্যাপী কনটেইনার সংকট ও ডলারের দাম বাড়ায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কনটেইনার ভাড়া।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে শুধু গার্মেন্টসের পোশাক ও কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানি করা হয় না। বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল স্ক্র্যাপ, ক্লিংকার, পিভিসি রেজিনের পাশাপাশি এলএনজি গ্যাস, ভোজ্যতেল, চিনি, গুড়োদুধ, বিভিন্ন ধরনের ফলমূলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়। জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া বাড়ার ফলে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে।
প্যাসিফিক গার্মেন্টসের স্বত্ত্বাধিকারী নির্মল গুপ্ত বলেন, ‘শীতকাল ও বড়দিনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে আমরা প্রচুর কার্যাদেশ পাচ্ছি। কিন্তু বাড়তি জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া আমাদেরকে ভোগাচ্ছে। করোনায় এত লোকসানের পরেও বাজারে টিকে থাকতে আমরা বিদেশি বায়ারদের কাছে পণ্যের বাড়তি দর দাবি করিনি। কিন্তু পোশাক পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। ফলে উৎপাদন পর্যায়েও স্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া বাড়তির দিকে রয়েছে। করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী শিপিং লাইন কমে যাওয়ায় জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়াও বেড়ে গেছে। সে সমস্যা এখনো কাটেনি। মাঝখানে কনটেইনার সংকটও তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে সে সংকট নেই, তবে করোনার সুযোগে ভাড়া বাড়াতে একটা বৈশ্বিক সিন্ডিকেটও কাজ করছে।’
‘আড়াই হাজার ডলারের কনটেইনার ভাড়া এখন ২২ থেকে ২৫ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। এটা যেহেতু বৈশ্বিক সমস্যা, এখন আমাদের কিছু করার নেই। তবে কনটেইনার ভাড়া বাড়ার কারণে কাঁচামালের আমদানি খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনায় বেশি।’ বলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।