ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
আগামীকাল (৩১ অক্টোবর) থেকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৬)। প্রতিবছর একবার এই সম্মেলন হলেও ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির পর এবারই বড় আকারে হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমনে সমান অর্থ বরাদ্দ চাইবে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখা, অভিযোজন কার্যক্রম বৃদ্ধি, লোকসান ও ক্ষতির জন্য একটি সেক্রেটারিয়েট স্থাপনসহ আরও কিছু দাবি তুলবে সরকার। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ কী কী ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসবে জানতে চাইলে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
করোনার কারণে গতবছর অনলাইনে এ সম্মেলন হয়। এবারের আয়োজনে ১২০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বা তাদের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। সম্মেলন শেষ হবে ১২ নভেম্বর।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রণালয়ের ৪৫ জন প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ীরা এই সম্মেলনে অংশ নেবেন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, এবারের সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে রাখা, জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রম বৃদ্ধি, লোকসান ও ক্ষতির জন্য একটি সেক্রেটারিয়েট স্থাপনসহ একাধিক দাবি থাকবে বাংলাদেশের।
সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হবে। এটাই হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবারের সবচেয়ে বড় দাবি। এ নিয়ে ইতোমধ্যে নানা মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা শুরু করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এরই মধ্যে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো বড় দুর্যোগ বেড়েছে। উপকূলীয় এলাকার অনেকে আবাস হারাচ্ছে। উন্নত দেশগুলো সাধারণত চায় প্রশমনে টাকা বরাদ্দ বেশি দিতে। আমরা চাই অভিযোজন ও প্রশমনে ‘ফিফটি ফিফটি’ বরাদ্দ হোক।
তিনি আরও বলেন, এখন ১০ বছর পর ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) আপডেট করা হয়। ভারত ও চীনও সেটা চায়। বাংলাদেশ চায় পাঁচ বছর পর পর আপডেট হোক। কারণ ১০ বছর অনেক লম্বা সময়।
জলবায়ু সম্মেলনে প্রতিটি দেশ তাদের নিজেদের অর্জন ও দাবিগুলো জমা দেয়। বাংলাদেশও সেগুলো প্রস্তুত করেছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ ডিগ্রি থেকে বেড়ে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্যারিস চুক্তির শর্ত হিসেবে এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে হবে। কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তাও নিশ্চিত করতে হবে। তবে বাংলাদেশ এই বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর সুপারিশ করবে।
পরিবেশ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় ডেল্টা প্ল্যান করেছি। এনডিসি আপডেট করছি। বিভিন্ন ইভেন্টের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অর্জনগুলো তুলে ধরবো।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের উন্নত ও শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জি-৭ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে— ২০৫০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নিঃসরণ ‘নেট জিরো’ তে নামিয়ে আনবে। এবারের সম্মেলনে ওই ঘোষণার প্রতিফলন দেখা যাবে বলে আশা করছি। সবগুলো দেশের কাছে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হবে।
খবর: বাংলা ট্রিবিউন