।। ডেস্ক রিপোর্ট।।
দেশে এখনও সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এখনও সম্ভব হয়নি। নানামুখী খাদ্য চাহিদার মধ্যে অন্যতম পোল্ট্রি খাতের খাদ্যের মান নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। দেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রানীজ আমিষের যোগান পোল্ট্রি সেক্টর দিয়ে থাকে। সে কারণে পোল্ট্রি খাদ্য নিরাপদ উৎপাদন, বিপনন যেমনি দরকার, তেমনি পোল্ট্রির মাংসও নিরাপদ করার জন্য সরকারি-বেসরকারি এবং ভোক্তাদের পক্ষ থেকে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন। কারণ ভোক্তা পর্যায়ে যখন পোল্ট্রি বিক্রি করা হয়, তখন সঠিকভাবে জবাই, সংরক্ষণ ও পর্যাপ্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার পরিছন্নতার মতো বিষয়গুলি যথাযথভাবে অনুসরণ করা না হলে পোল্ট্রির মাংস নিরাপদ হয় না।
এ সুযোগে কিছু অসাধু লোকজন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করে পুরো পোল্ট্রি শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। আবার বৃহৎ কর্পোরেট গ্রুপগুলি পোল্ট্রি খাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে সাধারণ ভোক্তাদের জিম্মি করতে পারে। তাই জনগণের মাঝে নিরাপদ খাদ্য, বিশেষ করে নিরাপদ পোল্ট্রি মাংস নিশ্চিত করতে সরকারি মান তদারকি প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অফিস, বিএসটিআই, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন ক্যাবের ঐক্যবদ্ধ সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
সম্প্রতি ইউকে এইড ও বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায়, প্রকাশ প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন আনয়নে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম-এর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা এমন অভিমত জানান। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগরীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই মাল্টি স্টেকহোল্ডারস কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন। তিনি বলেন, ‘কৃষি, মৎস্য, পশু সম্পদ সেক্টরে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। মানুষ এখন না খেয়ে মরছে না। কিন্তু সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এখনও সম্ভব হয়নি। সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে চলেছে।’
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম পুর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সেন, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাশহুদুল কবির, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক জসিম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসানুজ্জমান।
আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্ত, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দীন, বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমদ, চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশল মো. নুরুল আমিন, কর্নফুলী গ্যাস কোম্পানীর উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি খামারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, নাহার এগ্রোর মহাব্যবস্থাপক মনোজ চৌহান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, জানে আলম, জান্নাতুল ফেরদৌস, ফারজানা আখতার, ফতেয়াবাদ চিকস’র মুসলেম উদ্দীন।
কর্মশালায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভুষণ দাশ ও ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বৃটিশ কাউন্সিল প্রকাশ প্রকল্পের সমন্বয়কারি শ্যামল চাকমা।
কর্মশালায় ক্ষুদ্র খামারীরা নানা ধরনের অভিযোগ তুলে ধরেন, তারা জানান, পোল্ট্রি ফিডের অতিরিক্ত মূল্য, বাচ্চার দাম বেশি, ক্ষুদ্র শিল্পের সুবিধা না পেয়ে বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিলের বোঝা বহন, পরিবেশের ছাড়পত্র নিতে নানা ভোগান্তি, সিটি কর্পোরেশন লাইসেন্স ফিস বেশি, ব্যাংক ঋণ সুবিধা না পাওয়ার মতো নানা সমস্যার কারণে ক্ষুদ্র খামারীরা লোকসান গুনতে বাধ্য হচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্পের সাথে ৬০ লাখ লোক জড়িত থাকলেও তারা ক্ষুদ্র শিল্পের মর্যদা না পাওয়ায় সরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা থেকেও তাদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে। আবার ভোক্তারা জানান, খুচরা পোল্ট্রি বিক্রেতারা যত্রতত্র পর্যাপ্ত পানি ছাড়া জবাই করে পোল্ট্রি মাংস বিক্রি করার কারণে নিরাপদ পোল্ট্রি মাংস সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
উত্থাপপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন জানান, সরকার ক্ষুদ্র পোল্ট্রির স্বার্থ রক্ষায় বিদ্যুত বিলের ২০ শতাংশ রিভেট দেয়া হচ্ছে। তবে ক্ষুদ্র খামারীকে লাইসেন্সসহ সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের মাধ্যমে বিইআরসিতে আবেদন করতে হবে। তার পরও বিদ্যুৎ বিভাগ ক্ষুদ্র পোল্ট্রি খামারীকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করবে।
পরিবেশ ছাড়পত্র পেতে ভোগান্তির বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্ত জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি দেখে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তবে ক্ষুদ্র খামারীদের বিষয়টি সরলীকরণ করে দেখার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবার কথা বলেন। পোল্ট্রি খাদ্যের বিষয়টি বিএসটিআই অত্যাবশ্যীয় পণ্যের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হবার কারণে এখন থেকে পোল্ট্রি ফিডগুলোকে নিবন্ধন ও তদারকি জোরদার করার হবে বলে জানান বিএসটিআই’র সহকারি পরিচালক মোস্তাক আহমদ। তাহলেই বাজারে মানসম্মত পোল্ট্রি খাবার নিশ্চিত হবে।
পোল্ট্রি খাদ্যের মূল্য বিষয়ে নাহার এগ্রোর মহাব্যবস্থাপক মনোজ চৌহান বলেন, মানসম্মত খাবার বিক্রির কারণে দাম একটু বেশি হচ্ছে। তবে ফিড উৎপাদনের কাঁচামালগুলির দাম সহনীয় হলে এ দাম আরো কমবে। কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, খামারী, ওষুধ, পোল্ট্রি ফিড মিল, বিক্রেতা, লাইভ বার্ড বিক্রেতা, সাংবাদিক ও ক্যাব প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।