সিলেটে নিত্যপণ্যের বাজারে ধর্মঘটের প্রভাব

দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে সিলেটে জনদুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। যানবাহনের চাকা বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে জীবনযাত্রায়।

পর্যটনের নগর সিলেটের ব্যবসায়ীরা হয়েছেন ক্ষতির সম্মুখীন। আর সার্বিক প্রভাব পড়ছে জনসাধারণের ওপর।
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের মতো সিলেটেও ৪৮ ঘণ্টার বাস-ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হচ্ছে শনিবার (৬ নভেম্বর। এ কারণে যাত্রীরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। তেমনি ধর্মঘটের প্রভাবমুক্ত থাকছেন না সাধারণ মানুষও।

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে পণ্যবাহী গাড়িও বন্ধ রয়েছে। যে কারণে ক্রমশ ১০/১৫ টাকা করে কেজি প্রতি দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে। এতে করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্মঘটের কারণে এরইমধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কাঁচাবাজারে সব ধরনের সবজিতেও কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৫/১০ টাকা। নগরের কালিঘাট পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ ৪০ টাকা বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। ধর্মঘটের কারণে ১০ টাকা দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে রসুন দেশি ৫০ এবং এলসি ৯৫ বিক্রি হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ ও ১২০ টাকায়। ভোজ্য তেল খুচরা বাজারে পৌঁছেছে ৫ লিটার ৭৯০ টাকায়।

আর গ্রামগঞ্জের বাজারগুলো সঙ্গে শহরের বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের বাজারগুলোতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০ টাকা, রসুন এলসি ১৫০, ভোজ্য তেল লিটার ১৬৫ টাকা, চিনির কেজি ১০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম মার্ক দুধ ৩৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা বলছেন, কোনো কিছু ঘোষণার আগেই প্রভাব পড়ে দ্রব্যমূল্যের বাজারে। বর্তমানে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানুষের চলা দায় মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারাও।

সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি বলেন, জনজীবনে ধর্মঘটের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্যের প্রায় দোকানে কেজিতে ১০/১৫ টাকা বেড়ে গেছে। এটা মানুষের ওপর বড় বোঝা হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, সরকার হঠাৎ তেলের দাম না বাড়িয়ে আলোচনা করে বাড়াতে পারতো। বছরে সাত বার জিনিসপত্রের দাম বাড়ালে অস্বাভাবিক। এটা সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব পড়েছে।

সিলেটের পাইকারি বাজার কালিঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ধর্মঘটে দোকানগুলোতে বিক্রি কমে গেছে। কেবল স্থানীয়ভাবে বেচাকেনা হচ্ছে। ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তবে ধর্মঘট আরও ২/৩ দিন থাকলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে পরিস্থিতি বেহাল হবে। এখনও কালিঘাটে পেঁয়াজ ৪০ টাকা, রসুন দেশি ৫০, চায়না ৯৫, আদা ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দু’দিন পর সংকট সৃষ্টি হলে এ দাম থাকবে না।

সিলেটের কালিঘাট পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী সদস্য রহমত আলী বলেন, ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে পণ্যসামগ্রী সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে। তাতে জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিলে এমনিতেই দাম বাড়বে। তাছাড়া কতিপয় দোকানি অধিক মোনাফার আশায় কৃত্রিমভাবেই দাম বাড়িয়ে দেন। যার প্রভাব জনগণের ওপর পড়বে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এ টি এম শোয়েব বলেন, ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্যের বাজারে। আর যেকোনো সরকারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়া সুখকর নয়। তাতে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়। তবে ভতুর্কি চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাওয়াতে হয়তো সরকার ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে। কেননা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ডিজেলের লিটার ১৩০ টাকা। মূলত সঙ্গতি রাখতেই দাম বাড়ানো। তবে সরকারের উচিত ছিল স্টেক হোল্ডারদের সম্পৃক্ত করে আলোচনার মাধ্যমে দাম বাড়ানো।

তিনি বলেন, করোনার পর এমনিতে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে ৩ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমেছে। এরমধ্যে এ ধর্মঘট বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারে চেম্বার থেকে চেষ্টা চালানো হবে। ধর্মঘট প্রত্যাহারে সর্বাগ্রে প্রশাসনের ভূমিকা রাখা উচিত।

সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মুহিম বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। বিকেলে আবারও বৈঠক হবে। তাতে ধর্মঘট বাড়ানো হতে পারে। পরিবহন ধর্মঘট বা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে কেন্দ্র নেবে, আমরা কেবল তা পালন করবো। তবে পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাব জনজীবনে পড়েছে, এটা স্বীকার করেন তিনি।