নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে গণপরিবহণের ভাড়া পুনর্নির্ধারণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও গণপরিবহন মালিকদের মধ্যে বৈঠক চলছে।
রোববার (৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার পর রাজধানীর বিআরটিএ ভবনে এ বৈঠক শুরু হয়৷ দুপুর দেড়টায় এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত বৈঠক চলছে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মুহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ, শ্যামলী এনআর এর রাকেশ ঘোষ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও গণপরিবহন মালিকরা বৈঠকে উপস্থিত আছেন।
পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে বৈঠকে কতো শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা কোনো দাবি করিনি। ব্যয় বিশ্লেষণ করে যে ভাড়া আসবে, সরকার তাই নির্ধারণ করবে।
সভায় অংশ নিতে উপস্থিত ভাড়া নির্ধারণ-সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সোহাগ পরিবহন (প্রা:) লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক তালুকদার সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, আজ সভায় ভাড়া পুনঃনির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হবে, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০১৩ সালে সর্বশেষ বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বিআরটিএ কর্তৃক সর্বশেষ ব্যয় বিশ্লেষণ অনুযায়ী ভাড়া হতে পারে দূরপাল্লা ও মহানগরী এলাকায় যথাক্রমে ১.৮২ ও ২.১০ টাকা। বর্তমান বাস ভাড়ার সঙ্গে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির হার (২৩.০৮%) সমন্বয় করে বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনা হতে পারে। বিষয়টি সভায় আলোচনা হচ্ছে।
এছাড়া কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব কর্তৃক ঢাকা চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দূরপাল্লার রুটে ৬ থেকে ৭ বছর ধরে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি, করোনাকলীন সময়েও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোয় গত ৪ নভেম্বর বাস ভাড়া বাড়াতে আবেদন করা হয়। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এ বৈঠক আয়োজন হয়েছে।
২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা রুটে চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া (ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর ব্যতীত) যাত্ৰীপ্রতি প্ৰতি কিলোমিটারে ১.৪৫ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট জারি করা হয়।
২০১৬ সালের ৪ মে হতে ডিজেলের মূল্য ৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করায় আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা বাসের ভাড়া ১.৪৫ টাকার পরিবর্তে ১.৪২ টাকা পুনর্নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরিতে চলাচলরত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া যাত্রীপ্রতি প্রতি কিলোমিটারে যথাক্রমে ১.৭০ টাকা ও ১.৬০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
এছাড়া ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস উভয় ক্ষেত্রে ভাড়ার হার যাত্রীপ্রতি প্রতি কিলোমিটারে ১.৬০ টাকা নির্ধারণ হয়। এক্ষেত্রে বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা নির্ধারণ হয়।
২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর এলাকাভুক্ত এবং দূরপাল্লা রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জন্য ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। ওই ব্যয় বিশ্লেষণে দূরপাল্লা রুটে চালকসহ ৫২ আসন বিশিষ্ট ডিজেলচালিত বাসে যাত্রীপ্রতি প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ২.০৭ টাকা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া যাত্রীপ্রতি প্রতি কিলোমিটারে ২.২১ টাকা সুপারিশ করা হয়। তবে ওই ব্যয় বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।
ওই ব্যয় বিশ্লেষণে হিসাবের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে করণীয় ‘ভুল’ পরিলক্ষিত হয়, যা পরবর্তীতে চিহ্নিত হয়। ২০১৯ সালের অননুমোদিত সুপারিশে এর ব্যয় বিশ্লেষণ অনুযায়ী দূরপাল্লা ও মহানগর এলাকায় চলাচলকারী ডিজেলচালিত বাস ভাড়া হবে যথাক্রমে ১.৯৪ টাকা ও ২.৩৩ টাকা।
ওইসময় ব্যয় বিশ্লেষণে ডিজেলের দাম ছাড়া ব্যয়ের সব আইটেম অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র ডিজেলের দাম ৬৫ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা পুনর্নির্ধারণ হলে দূরপাল্লা ও মহানগর এলাকায় চলাচলকারী ডিজেলচালিত বাসের বর্ধিত ভাড়া হয় যথাক্রমে ২.০৯ টাকা ও ২.৪৯ টাকা।
তবে চলমান বৈঠক শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে কর্তৃপক্ষ।
আরইউ