রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে, ডিজেলসহ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে টানা তিনদিনের ‘অঘোষিত’ পরিবহন ধর্মঘট শেষে বাসভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা আসতেই রোববার সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির বাস চলাচল শুরু হয়। পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে গণপরিবহনে নতুন করে ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন ভাড়া অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসে ২৭ শতাংশ আর মহানগরে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বেড়েছে। এছাড়া বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক যাত্রীই অভিযোগ করেছে যে বাস ভাড়া বাড়ানোর অজুহাতে ইচ্ছেমত যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে গণপরিবহনে ভাড়া পুনর্নির্ধারণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের বৈঠকের পর নতুন ভাড়া নির্ধারিত হয়। এরপর নেতারা পরিবহন চালুর আহ্বান জানালে সন্ধ্যার পর থেকে বাস চলাচল শুরু হয়।
নতুন সমন্বিত ভাড়া অনুযায়ী, দূরপাল্লার বর্তমান বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা, তা বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ এতে কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৩৮ পয়সা গুনতে হবে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দূরপাল্লার একজন যাত্রীকে প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে ১ টাকা ৯০ পয়সা বেশি ভাড়া দিতে হবে।
মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা, সেটি বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। এতে কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বেড়েছে। ফলে মহানগর এলাকায় একজন বাসযাত্রীকে পাঁচ কিলোমিটার ভ্রমণের জন্য বাড়তি ২ টাকা ২৫ পয়সা গুনতে হবে।
এছাড়া মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। এটি বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। এতে ভাড়া বাড়ে কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা। ফলে মহানগর এলাকায় চলাচলকারী মিনিবাসের ভাড়া পাঁচ কিলোমিটারে ২ টাকা ২৫ পয়সা বাড়লো।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। গত বুধবার (৩ নভেম্বর) রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়।
ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরদিনই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে বাস, ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকরা। এতে সারাদেশে মানুষকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের হওয়ায় দুর্ভোগ কবে শেষ হবে, এ নিয়েও অনিশ্চয়তায় পড়ে মানুষ।
তবে তেলের দাম বাড়ানোর পর শুরু থেকেই পরিবহন মালিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছিলেন, ডিজেলের দাম না কমানো হলে গণপরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনে ভাড়া সমন্বয় করতে হবে। এনিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বিআরটিএকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।