ভোক্তাকণ্ঠ প্রতিবেদক: বড় পুকুরিয়ার কয়লা খনিতে এক দশমিক ৪৪ লাখ মেট্রিক টন কয়লা চুরির অভিযোগে মামলা হলেও সেখানে প্রকৃতপক্ষে ৫ দশমিক ৪৮ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাৎ হয়েছে বলে দাবি করেছে কনজুমার্স অ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা চুরির অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ক্যাব।
বড়পুকুরিয়ায় কয়লা চুরির ঘটনাকে পুকুর চুরি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। লুণ্ঠনকারীদের আমরা দায় থেকে মুক্তি দিতে পারি না বলে সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অভিযোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কমিশন’র সভাপতি সৈয়দ আবুল মকসুদ।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদ নষ্ট করার বড় উদাহরণ বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি। এজন্য দোষীদের আমরা শাস্তি চাই। এই চুরির বিচার না করা আরেকটা অন্যায় হবে।”
ক্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে কয়লা চুরি সংক্রান্ত ২৭টি অসংগতি। এর মধ্যে কয়লা মজুদ আছে বলে খোলা বাজারে কয়লা বিক্রি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা মজুদ না করে খোলা বাজারে বিক্রি, তিনশত টন কয়লা আত্মসাতের অভিযোগে আনিত মামলা প্রত্যাহার ইত্যাদি।
দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনের বড় উদাহরণ এটি উল্ল্যেখ করে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমরা কমিটির পক্ষ থেকে ব্যাপক অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছি। সরকারও কমিটি গঠন করেছে। আমরা সব পক্ষের সাথে কথা বলেছি। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। অনুসন্ধানে প্রশাসনও আমাদের সাথে ছিলো, তাদের সহযোগিতাও পেয়েছি।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, শুধু সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী নয়, পরিচালনা বোর্ড, পেট্রোবাংলা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ব্যর্থ হয়েছে। দুদকের অভিযোগপত্রে বিসিএমসিএল’র ৭ জন এমডিসহ ২৩ জন অভিযুক্ত। তবে আমাদের তদন্ত কমিশনের মতে কেবল ২৩ জনই নন, পরিচালনা বোর্ডের সদস্যবৃন্দ, বিসিএমসিএলের শেয়ার হোল্ডার এবং পেট্রোবাংলাসহ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে কয়লা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।”
তিনি আরো বলেন, “তদন্তে উঠে এসেছে পর্যাপ্ত কয়লা না থাকা সত্বেও এবং নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে খোলা বাজারে কয়লা বিক্রি অব্যাহত রাখা হয়। ফলে কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়।”
তদন্ত কমিশনের সদস্য এম এম আকাশ বলেন, “এখানে রক্ষক ভক্ষক হয়েছে, এটাই মূল বিষয়। একদম ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবার দায়িত্ব ছিল এটি সঠিকভাবে দেখা, কিন্তু সেটা এখানে করা হয়নি।”
২০১৮ সালের জুলাইয়ে কয়লা সরবরাহ না পাওয়ায় বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে আলোচনায় আসে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি। সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দুজনকে বদলি করা হয়। আর এই ঘটনায় মামলা হলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে নামে। প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন কয়লা চুরির অভিযোগে খনি কোম্পানির সাবেক সাত এমডিসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, পেট্রো বাংলার প্রস্তাব মতে কয়লা সরবরাহের সিস্টেমলস ১.৫ শতাংশ ধরে নিলেও আত্মসাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও প্রফেসর সুশান্ত কুমার দাস।