মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেনুইন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের উদ্ধার কর্মীরা ফেরিটি পুরোপুরি উদ্ধার কাজ শেষ করেন।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেনুইন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বদিউল আলম ফেরি উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল সোমবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় নদীতে অর্ধেক ডুবে থাকা ফেরিটি ৮০ ভাগ উদ্ধার কাজ শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলবার বাকি ৩০ ভাগ কাজ শেষে ফেরিটিকে পুরোপুরি সোজা করার মধ্য দিয়ে উদ্ধার কাজ শেষ হয়।
জেনুইন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সিইও বদিউল আলম বলেন, ডুবে থাকা ফেরিটি উদ্ধার করা হয়েছে। ফেরির তলদেশে প্রায় শতাধিক বড় ছিদ্র পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার এবং আজ মঙ্গলবার সেগুলো রাবার ও লোহার পাত দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। আগামী দুই দিন ফেরিটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তারপর বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে ফেরিটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক (উদ্ধার) ফজলুর রহমান বলেন, ডুবে থাকা ফেরিটি শতভাগ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের উদ্ধারকর্মী দিয়ে ফেরিটি ভেতরে থাকা কাদামাটি, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। এ সকল কাজ শেষ হলেই ফেরিটি বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে কী কারণে ফেরিটি ডুবে গেছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য এখনও জানা যায়নি বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ আমাদের কাছে ফেরিটি বুঝিয়ে দেওয়ার পর ফেরিটি চলবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নেবে তদন্ত কমিটি। তাছাড়া এই মুহূর্তে ফেরিটি চালানো সম্ভব না। ডুবে থাকা ফেরিটির সবগুলো ইঞ্জিনসহ অনেক যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে গেছে। সেগুলো মেরামত করার পর ফেরিটি আবারও নৌপথে চলাচল করবে কিনা সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর সকালে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে গিয়ে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ১৭টি যানবাহন নিয়ে নোঙর করে ফেরি আমানত শাহ। এরপর ফেরি থেকে তিনটি যানবাহন নামার পরপরই ১৪টি যানবাহন ও পাঁচটি মোটরসাইকেলসহ ডান দিকে কাত হয়ে ডুবে যায় ফেরিটি। এ ঘটনার পরপরই ডুবে যাওয়া যানবাহন উদ্ধারে অভিযানে নামে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা। উদ্ধার অভিযানের চতুর্থ দিনে যুক্ত হয় আরেক উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম। হামজা ও রুস্তম ডুবে যাওয়া সকল যানবাহন উদ্ধারে সক্ষম হয়। এরপর উদ্ধার হওয়া সব যানবাহন মালিকদের নিকট হস্তান্তর করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ উদ্ধারে হামজা ও রুস্তমের সক্ষমতা না থাকায় বেসকারি প্রতিষ্ঠান জেনুইন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সঙ্গে দুই কোটি টাকায় ফেরিটি উদ্ধার করতে চুক্তি করে বিআইডব্লিউটিএ। চুক্তি অনুযায়ী জেনুইন এন্টারপ্রাইজের উদ্ধার কর্মীরা ১ নভেম্বর ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফেরি উদ্ধারের প্রাথমিক কাজ শুরু করেন।
পরে তাদের পাঁচটি উদ্ধারকারী বিশেষ জাহাজ (উইন্স বার্জ) ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর গতকাল সোমবার সকালে ফেরি উদ্ধারের মূল কার্যক্রম শুরু করে। টানা আট দিনের চেষ্টার পর আজ বিকেলের দিকে জেনুইন এন্টারপ্রাইজের উদ্ধার কর্মীরা উইন্স বার্জের তার দিয়ে টেনে ফেরিটি পুরোপুরি সোজা করতে সক্ষম হন। তবে এই ফেরিডুবির ঘটনায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।