ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড প্রণয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগকে ২০১০ সালের শিক্ষানীতি, জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপন্থী বলেছেন দেশের ৩৬ শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তি। এ নিয়ে তারা একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
তারা বলছেন—প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই আইন প্রণয়ন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বিনামূল্যে বই দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাইড বই ব্যবহারের প্রবণতা কমেছে। ২০২১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায়’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রতিফলন লক্ষ্য করেছি আমরা। যেখানে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা রাখা হয়নি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষাকে ‘পাবলিক পরীক্ষা’ হিসেবে ধরা হয়নি। এর পরিবর্তে বলা হয়েছে, স্থানীয়ভাবে উপজেলা, পৌরসভা বা থানা পর্যায়ে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমাপনী পরীক্ষা হবে।”
কিন্তু সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমলে না নিয়ে এবং জাতীয় শিক্ষানীতিকে পাশ কাটিয়ে ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২১’ নামের একটি আইনের খসড়া মতামতের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘শিক্ষানীতি ২০১০’ ও ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’-এর নীতি ও অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ কেন নেওয়া হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। যেখানে করোনার কারণে গত শিক্ষা বছরে একটি পরীক্ষাও হয়নি। এমনকি এ বছরও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা হবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেখানে এই বোর্ড গঠনের প্রস্তাব কতটা যৌক্তিক তা প্রশ্নসাপেক্ষ।”
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদানকারীদের অভিমত—প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের মানসিক-শারীরিক বিকাশ ও প্রতিভার উন্মেষ ঘটাতে শুধু পরীক্ষা নির্ভর, সনদসর্বস্ব ব্যবস্থার পরিবর্তে সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হোক।
তাদের মতে, প্রস্তাবিত ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২১’ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাঁধে বইয়ের বোঝা বাড়াবে এবং করোনার মতো মহাবিপর্যয়ের পর অভিভাবকদের কোচিং ও গাইডবইয়ের পেছনে ব্যয় বাড়াবে। এসব কারণে মন্ত্রণালয়কে তারা এমন ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানিয়েছেন।
তারা আশা করছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর পরিচালিত জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের (এনএসএ) মতো প্রক্রিয়াকে কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দেবে সরকার।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন যারা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, প্রখ্যাত নাট্যকার নাসিরউদ্দনি ইউসুফ বাচ্চু, ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধুরী, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ, অভিনতা ইলিয়াস কাঞ্চন, বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, নাট্যকার ডা. এজাজুল ইসলাম, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের পরিচালক ড. আবদুল হালিম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সঙ্গীত শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শফি আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, একশন এইডের নির্বাহী পরিচালক ফারহা কবীর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহম্মদ আব্দুল মজিদ, বিআইডিএস-এর গবেষক ড. আনোয়ারা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের অধ্যাপক হান্নানা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. তারিক আহসান, শিক্ষা গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. সৈয়দা তাহমিনা আখতার, পর্বতারোহী এম এ মুহিত এবং শিক্ষা গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. আবদুল মালেক।