ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
খেলাপি ঋণ পরিশোধের জন্য সরকার নানা সুবিধা দিলেও কমছে না। উল্টো বেড়েই চলছে খেলাপির পরিমাণ। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সে হিসেবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।
খেলাপিরা বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ না করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। মামলা করে ঝুলিয়ে রাখেন। বেশি সমস্যা হলে হাইকোর্টে গিয়ে রিট করেন। ঋণ খেলাপি আমাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় গত বছর কেউ কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি দেখাতে পারেনি ব্যাংক। এ বছর নতুন করে আগের মতো সব সুযোগ দেওয়া হয়নি। তবে অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন শিথিলতার আওতায় চলতি বছর একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। এরপরও খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
খেলাপি হলে কোনো শাস্তি নেই বরং পুরস্কৃত হয়, যার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বলে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপিরা বারবার ঋণ পরিশোধের সময় পান, পুনঃতফসিলের সুযোগ পান। মামলা করে ঝুলিয়ে রাখেন। বেশি সমস্যা হলে হাইকোর্টে গিয়ে রিট করেন। এভাবেই বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ না করে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। এসব দীর্ঘসূত্রতার কারণে খেলাপি হওয়া আমাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, যে কারণে মন্দ ঋণ বাড়ছে।
মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয় এক সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিতে হবে বলে মনে করেন মির্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাশাপাশি যেসব ব্যাংকের ঋণ খেলাপি বেশি তাদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করে ২ লাখ ১৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ছিল ৪২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। ওই সময় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কোভিডের কারণে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি একাকার হয়ে গেছে। এখন তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করার সময় এসেছে। এখন যে পরিমাণ দেখা যাচ্ছে এটা খেলাপির প্রকৃত চিত্র নয়। ছাড় ও সুবিধা তুলে নিলে খেলাপির অংক আরও বেড়ে যাবে।