আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মলাস্কা হলো সবচেয়ে বৃহত্তম সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রজাতি একটি। গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী শত শত মলাস্কা প্রজাতির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন গবেষকরা। নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, সমুদ্রের তলদেশ খনন জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে আরেকটি বিপদের ঘণ্টা বাজছে। খবর: দ্যা গার্ডিয়ান
বেলফাস্টের কুইন্স ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে করা এই গবেষণার ফলে হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের আশপাশে বসবাসকারী ১৮৪টি মলাস্কা প্রজাতিকে হুমকির সম্মুখীন প্রজাতির বৈশ্বিক লাল তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে, যা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) দ্বারাও প্রণীত হয়।
গবেষকরা শুধু মলাস্কা প্রজাতিকে নিয়ে গবেষণা করলেও ভেন্টের (সমুদ্রের তলদেশে উষ্ণ প্রস্রবণ) বিস্তৃত এলাকার মধ্যে ক্রাস্টেসিয়ান বা ভেন্টের ওপর নির্ভরশীল অন্য কোনো প্রজাতির জন্য বিলুপ্তির ঝুঁকি আনতে পারে।
সমুদ্রের ৮০ শতাংশ এখনও ম্যাপবিহীন, দৃষ্টিগোচর নয় এবং অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। এর বিপরীতে গভীর সমুদ্রে খননকাজ চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ। সুশীল সমাজ ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি অনিবার্য এবং এটি ঘটতে থাকলে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
প্রধান গবেষক এলিন থমাস বলেন, আমরা যে প্রজাতিগুলো অধ্যয়ন করেছি তারা তাদের বেঁচে থাকার জন্য হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের অনন্য বাস্তুতন্ত্রের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। যদি গভীর সমুদ্রের তলদেশ খনন কোম্পানিগুলো ভেন্টগুলোতে তৈরি হওয়া সব ধাতু চায়, তাহলে তারা সব আবাসস্থল সরিয়ে ফেলবে যেগুলো এসব প্রজাতি থেকে আসে৷ অথচ এসব প্রজাতির আর কোথাও যাওয়ার নেই।
জাতিসংঘের সমুদ্র-তলদেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ (আইএসএ) জ্যামাইকার কিংস্টনে একটি বৈঠকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে সমুদ্র খনন করে কোবাল্ট, নিকেল ও অন্যান্য ধাতু আহরণের জন্য একটি রুটের অনুমোদন দেয়।
বিশ্বজুড়ে অন্তত ছয়শ অজানা ভেন্ট রয়েছে, যার গভীরতা দুই হাজার থেকে চার হাজার মিটার এবং প্রতিটি একটি ফুটবল মাঠের আকারের এক তৃতীয়াংশের সমান। তারা প্রাকৃতিক নদীর গভীরতা নির্ণয় সিস্টেম হিসেবে কাজ করে, বিশাল গিজারে পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে তাপ এবং রাসায়নিক পরিবহন করে এবং তারা সমুদ্রের রসায়ন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলে বিশাল এবং মূল্যবান খনিজ জমা হয়, প্রবাল প্রাচীরের মতো।
গবেষকরা বলছেন, ১৮৪টি প্রজাতির মধ্যে ৬২ শতাংশ হুমকির মুখে রয়েছে, যাদের গভীর সমুদ্র খননের লাইসেন্স পাওয়া জাপান এবং পাপুয়া নিউগিনির মতো দেশগুলোর আঞ্চলিক জলসীমায় অবস্থিত।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি হুমকির প্রবণতা বাড়ছে। যেখানে প্রত্যেক প্রজাতি ৬০ শতাংশ বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় চলে গেছে এবং এই অঞ্চলে আইএসএর অনুমোদন রয়েছে গভীর সমুদ্র খননের। গভীর সমুদ্রের তলদেশ খননের নেতিবাচক প্রভাব এবং মলাস্কা প্রজাতির বিলুপ্তির এই গবেষণাপত্রটি ফ্রন্টিয়ারস ইন মেরিন সায়েন্স প্রকাশ করা হয়েছিল এবং আয়ারল্যান্ড মেরিন ইনস্টিটিউটও এটি সমর্থন করে।