ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
এলাকায় শেয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে নিজের পরিচয় দিলেও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে চাকরির প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কেটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মিজানুর রহমান মিজান। দাবি করতো ‘ব্যবসা’ করেই বিপুল টাকা আয় হচ্ছে তার। মূলত প্রশ্ন ফাঁসের ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল সে। সমন্বিত পাঁচ ব্যাংক নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁস চক্রের এই সদস্যকে রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম। সোমবার ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মিজান।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘এর আগে ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের ১৩ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সর্বশেষ মিজান নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতার করতেও অভিযান চালানো হচ্ছে।’
৬ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাকরির প্রশ্নফাঁস চক্রের প্রথমে পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও রাইসুল ইসলাম স্বপন। পরের দিন গ্রেফতার করা হয় সোহেল রানা, এমদাদুল হক খোকন ও এবিএম জাহিদ নামে আরও তিন জনকে।
এ ছাড়া একই সময়ে গ্রেফতার করা হয় ব্যাংক নিয়োগের প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব পাওয়া আহছান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মচারী দেলোয়ার, পারভেজ ও রবিউলকে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে জাহিদ ও রবিউলকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার হওয়া ১৪ জনের মধ্যে ৫ জনই রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মরত ছিল। চাকরির পাশাপাশি তারা নিয়মিত সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে বিপুল টাকার মালিক হয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মিজানের গ্রামের বাড়ি রংপুরের কোতয়ালী থানাধীন আলমনগর মহাদেবপুর এলাকায়। বাবার নাম আব্দুল কাদের। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিজান জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিল সে। সর্বশেষ সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন রাশেদ আহমেদ বাবুল ও মুবিনের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকায় কেনেন। পরে তিনি সেই প্রশ্ন জাহাঙ্গীর আলম জাহিদের কাছে এক কোটি ২০ লাখ টাকায় সেটা বিক্রির জন্য চুক্তি করেন।
আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি ও গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানিয়েছে, জাহিদ তার কাছ থেকে প্রশ্ন কিনে তা জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল রানার কাছে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকায় বিক্রির জন্য চুক্তি করেছিল।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পর যতবার হাত বদল হয় তত দাম বাড়তে থাকে। এ ছাড়া প্রত্যেক হাত থেকেই একেবারে সরাসরি চাকরি প্রত্যাশীদের কাছেও ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে বিক্রি করা হয়। চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে এ কাজ করে আসছিল।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারী বিশাল এক চক্রের সন্ধান পেয়েছেন তারা। পর্যায়ক্রমে সবাইকে আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে যারা চাকরি পেয়েছে তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে। যাদের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।