ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: মুন্সিগঞ্জের হিমাগারগুলোতে এখনো প্রচুর পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে। নতুন আলু বাজারে উঠতে শুরু করায় দিন দিন কমছে পুরোনো আলুর চাহিদা। চার টাকা কেজি দরে হিমাগারে আলু বিক্রি হলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। দাম না থাকায় আলুর মালিকরা হিমাগারে আলু বিক্রি করতে আসছেন না। এতে বিপাকে পড়েছেন হিমাগার মালিকরা।
কয়েকজন হিমাগার মালিক বলেন, আলু মালিকরা দলিলগুলো আমাদের দিয়ে গেলে আমরা নামেমাত্র মূল্যে আলু বিক্রি করে হলেও ভাড়ার টাকার আংশিক আদায় করতে পারতাম। এছাড়া আলু মালিকরা আলু রাখার সময় আমাদের কাছ থেকে বস্তা প্রতি ঋণ নিয়েছেন। ঋণের সুদের টাকাতো দূরের কথা মূল টাকার থেকেও তারা যদি কিছু অংশ বাদ দিয়ে আমাদের দিতো আর তাদের আলু নিয়ে যেত, তাহলে হয়তো সময় মতো আমরা আবার আগামী বছরের জন্য আলু সংরক্ষণ করতে হিমাগারগুলো প্রস্তুত করতে পারতাম।
সরেজমিনে টঙ্গিবাড়ী ও মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হিমাগারের ভেতরে ও হিমাগারের পাশে পচা আলুর স্তূপ। হিমাগারগুলো থেকে বর্তমানে যে আলুগুলো বের করা হচ্ছে তার মধ্যে লম্বা শিকর গজিয়েছে। দীর্ঘদিন হিমাগারে আলু সংরক্ষণের কারণে বস্তাগুলো পচে গেছে। এ মৌসুমে হিমাগারগুলো থেকে নামেমাত্র আলু বের হচ্ছে।
তবে হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছে- এখনো প্রচুর পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুত রয়েছে। বর্তমানে ৪-৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬-৭টাকা। এক বস্তা (৫০ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা। অথচ হিমাগার ভাড়া ৩০০ টাকা। হিমাগার ভাড়া ও উৎপাদন খরচসহ এক কেজি আলুর দাম পড়ে ১৮-২০ টাকা। তবে দিন দিন আলুর দাম কমছে।
এদিকে এ বছর আলু রোপণ মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে বীজ পচে মুন্সিগঞ্জ জেলার আলুচাষিদের ১৫৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা হিমাগারে রক্ষিত আলুর দাম না পেয়ে ধারদেনা করে পুনরায় আলু চাষ করেছেন। আলু চাষ বিলম্বিত হওয়ায় আলু পরিপক্ক হতে যে সময় প্রয়োজন, সে সময় না পাওয়ায় এ বছর আলু উৎপাদন অনেক কম হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আলুর পাইকার হাজী আব্দুল হাই দেওয়ান বলেন, আলু কিনে হিমাগারে রেখেছিলাম। এখন কেনার মতো কেউ নেই। তাই আলু আড়তে নিয়ে যাচ্ছি।
অপর আলু ব্যাবসায়ী মো. রতন বলেন, গত সপ্তাহে ৬ থেকে ৭ টাকা কেজি দরে হিমাগার থেকে আলু কিনেছি। কিন্তু এখন ৪-৫ টাকা কেজি দরে কিনছি। তারপরও আড়তে আলু বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সানোয়ারা ও নুর কোল্ড স্টোরেজের সুপারভাইজার ইউসুফ হোসেন বলেন, আমাদের হিমাগারে এখনো ১৭ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। এখন আর আলু নিতে হিমাগারে আসছেন না আলু মালিকরা। আমরা আলু রাখার শর্তে ঋণ দিয়েছিলাম। কিন্তু ঋণের সুদতো দূরের কথা আসল টাকাও পাচ্ছি না। যদি তারা ঋণের আসল টাকার কম দিয়েও আলু নিয়ে যেত, তাহলে আমরা আলু দিয়ে দিতাম। কিন্তু কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগই করছেন না। আলু না নিলে আলু মালিকরা যদি দলিলগুলোও দিয়ে যেত, তাহলে আলু বিক্রি করে ভাড়ার আংশিক টাকা আদায় করতে পারতাম।
মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন আলু। এর মধ্যে কৃষকরা সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন।
মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, গত বছর চাহিদার তুলনায় আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছিল। আলুর বিকল্প ব্যবহার না বাড়ায় আলুর এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টিতে এ বছর মুন্সিগঞ্জের আলুচাষিদের ১৫৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির বীজগুলো বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির বীজ দিয়ে আলু চাষ করেছেন। এতে এ বছর উৎপাদন অনেকটা কম হবে।