ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের (জিডিএফ) তিন হাজার কোটি টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত বছরের শেষ দিকে কমিশনের এক বৈঠকে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। গ্রাহকের টাকায় গড়ে ওঠা এ অর্থে দেশের তেল গ্যাসের অনুসন্ধান উন্নয়ন কাজের জন্য পৃথক নীতিমালাও রয়েছে।
কমিশন চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, আপাতত পেট্রোবাংলাকে এই অর্থ তাদের তহবিল থেকে ফেরত দিতে হবে। এরপর অর্থ বিভাগ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলা ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।
জিডিএফ-এর এই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে গ্রাহকের অর্থে গড়ে ওঠা এই তহবিল পেট্রোবাংলার কাছেই থাকার কথা। কীভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে গেলো, সেটি বিস্ময়ের।
জিডিএফ নীতিমালা অনুযায়ী, গ্যাসখাতের কোম্পানিগুলোতে যে বিনিয়োগ হয়েছে সেখানকার লাভজনক প্রকল্পগুলো থেকে টাকা ফেরত আনতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলছে কমিশন। এখনও জিডিএফ থেকে অর্থ নিয়ে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেগুলো লাভজনক হলেও কেউ আর টাকা ফেরত দেয় না।
মাত্র ২ ভাগ সুদে জিডিএফ থেকে প্রকল্প সহায়তা নিয়ে গ্যাসখাতের কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। দেখা গেছে জিডিএফ গঠনের আগে গ্যাস কোম্পানিগুলোকে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার কিংবা দাতা সংস্থার দিতে তাকিয়ে থাকতে হতো।
জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পেট্রোবাংলায় গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে মুনাফাসহ জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৩২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই তহবিলের অর্থায়নে ২৫টি সমাপ্ত প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় ছিল ৩৪৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত বাপেক্স, বিজিএফসিএল (বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড) এবং এসজিএফএল (সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেড) এর অনুকূলে ৪ হাজার ৯১০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে বর্তমানে স্থিতির পরিমাণ ৫ হাজার ৪০৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
এ পর্যন্ত এ তহবিল থেকে বাপেক্স-এর ২৫টি, বিজিএফসিএল-এর ৯টি এবং এসজিএফএল-এর ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির এক সদস্য জানান, ‘জিডিএফ ফান্ডের টাকা ফেরত আনার বিষয়ে আমরা বার বার তাগাদা দিচ্ছি। এ ফান্ড রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাওয়ার কথা নয়। এই টাকা পেট্রোবাংলা দেখিয়েছিল উদ্বৃত্ত হিসাবে। এই কারণেই সরকার সেটা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে যায়। যদি বলতো টাকাটা গ্যাস বিলের সঙ্গে দেওয়া গ্রাহকের চাঁদার টাকা, তাহলে তা নিতো না। তারা একটা পলিসি করার কথাও বলেছিল। সেখানে আমরা বলেছি পেট্রোবাংলাকে প্রথমেই এই কথাটা প্রত্যাহার করতে হবে যে, জিডিএফ কোনও উদ্বৃত্ত অর্থ নয়, এটা গ্রাহকের টাকা, এই টাকা গ্যাস উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের জন্য গ্রাহক দিচ্ছে।
জানা যায়, গত ছয় মাসে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এভাবেই পেট্রোবাংলা জমা দিয়েছে। এর আগেও টাকা কোষাগারে জমা হয়েছে বলে জানা যায়।