অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, সিনিয়র সহ-সভাপতি, ক্যাব
আমরা প্রতিবাদী হতে চাই। সমস্যা সমাধানের জন্য সক্রিয়ভাবে সরকারকে শক্তিশালী করতে চাই। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকারও অনেক ক্ষেত্রে অসহায়। এখন যে বিষয়গুলো এসেছে তার মধ্যে একটা বিষয় আমি শুধুতুলে ধরবো। যে যৌক্তিক মূল্যের কথা বলা হয়েছে, ন্যায্যমূল্যের কথা বলা হয়েছে, সঠিক মূল্যের কথা বলা হয়েছে। পণ্য বা সেবা যা কিছুই ক্রেতা হিসেবে কিনি না কেনতার মূল্যটা সঠিক হতে হবে। সেই সঠিকটা আইন দ্বারা নির্ধারিত হতে হবে অর্থাৎ BERC প্রবিধান দ্বারা এই মূল্য নির্ধারণ করবে, আইনে একেবারে স্পষ্ট করে বলা আছে। এবং এর থেকে যদি বেশি মূল্য নেওয়া হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা কম্পিটিশন আইন অনুযায়ী সেটা লুন্ঠন মূলক মূল্য বলতে পারি। তিনি লুন্ঠন করছেন তাকে অবশ্যই ফৌজদারি আদালতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়। তাহলে এবার আসা যাক, সাড়ে সাত বছর ধরে যে ৪৩০০০ কোটি টাকা এভাবে আমাদের কাছ থেকে যা নেওয়া উচিত তার থেকে বেশি নিয়ে গেছে এটা বিপিসি স্বীকার করেছে।
BERC আইন ৪৩ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধসেটা অর্থদণ্ড এবং কারাদণ্ডউভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবার অপরাধ । অপরাধ করেছে BERC , জ্বালানি বিভাগ করেছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা করেছে। তাহলে তাদের শাস্তি এই আইনের আওতায় যদি আমরা চাইতে না পারি আর তাদের এই শাস্তির মুখোমুখি না করতে পারি BERC আর কার্যকর থাকে না। এখন আসি যে সরকারি খাতে ব্যবসা আর বেসরকারি খাতে ব্যবসা। LPG ব্যবসা বেসরকারি খাতের আওতায় আছে। আমরা বলছি, বেসরকারি খাতে BERC আইন প্রতিষ্ঠা করেছি এবং তাদের মূল্য নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা মনে করি যে, কালচারালি আমরা অনেক পেছনে ছিলাম।এই ধারার মধ্য দিয়েসেই প্রক্রিয়ার বর্ণনা আপনারা পেয়েছেন। অন্তত মূল্যহার বিধি দ্বারা নির্ধারিতপদ্ধতিতে হওয়া শুরু হয়েছে এটা আরো গতিশীল আমরা করতে পারবো এবং সেটা আমরা এই সক্ষমতা দেখাতে পেরেছি। পরবর্তী পর্যায়ে আরো সক্ষমতা আমরা দেখাতে পারব এবং বিআরসি কে আরো সক্ষম হতে আমরা বাধ্য করতে পারব। এইবার আসি সরকারি খাতে ব্যবসা। সরকারিখাতে ব্যবসাটা-বিপিসি সরকারিখাতে তেলের ব্যবসা করে, গ্যাসের ব্যবসা তিতাস, পেট্রোবাংলা এলপিজি ব্যাবসা করে, আরপিজিসিএল কয়লার ব্যবসা করে এসব সরকারিখাতে ব্যবসা হয়। প্রত্যেকটা ব্যবসা ই মনোপলি। এসব ব্যবসার প্রধান কারা? যে সমস্ত কোম্পানি BERC এর লাইসেন্সপ্রাপ্ত; কয়লা কোম্পানি ছাড়া। এইবার আসেন ট্রানস্মিশন ডিস্ট্রিবিউশন লাইনেপিজি সিটির চার্জবাড়াতে হবে সেখানে কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও ২১% বাড়ানো হলো।কেন বাড়ানো হলো? পিজিসিটির তখন চেয়ারম্যান ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব। তিনি চেয়েছেন, বিআরসি বাড়িয়ে দিয়েছে। তিতাসে কোন রেভিনিউ রিকোয়ারমেন্ট দরকার পাঁচ পয়সা, তাকে ২৫ পয়সা দেওয়া হয়েছে; চৌদ্দশ কোটি টাকা বছরে দেওয়া হয়েছে। এটা কেন দেওয়া হয়েছে? তিতাসে বোর্ড অফ ডাইরেক্টর চেয়ারম্যান হচ্ছে সেই সচিব।এভাবে মুখ্যসচিব যদি হয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ারম্যান, তাহলে তিনি যদি চান যে সিওডি ঘোষণা করা যাচ্ছে না, তার ডিমান্ড নেই। তারপরেও সিওডি ঘোষণা করে কমার্শিয়াল অপারেশনেএনে যে বিদ্যুতের দাম পড়ার কথা ছিল ৬ টাকা বিদ্যুতের দাম দশ টাকার উপরে এখন পড়ছে। তাহলে বিআরসি অচল হবে না, সরকার অচল হবে না, তাহলে অরাজকতা কি এটা চরম নয়? তাহলে একদিকে হচ্ছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হিসেবে বিদ্যুৎ জ্বালানি বিভাগের সচিব উপসচিবরা আচরণ করছে। এলপিজি তাদের ব্যবসার স্বার্থ সংরক্ষণ করেছে, মুনাফা বৃদ্ধি করেছে, লুণ্ঠন মূলক মুনাফা করেছে। কিন্তু সরকারের কোম্পানি যদি এইভাবে মুনাফা করে, সেটা কে ঠেকাবে?
সরকারের প্রতিনিধিত্ব তারা করে, সরকার এখানে অচল, সরকার এখানে অসহায় দেখা যাচ্ছে। কারণ প্রতিটা আইনের যেসমস্ত আদেশ আসছে, যে সমস্ত নির্দেশনা আসছে তার একটার পর একটা প্রমাণিত হচ্ছে।এই প্রমাণ এর শেষ কোথায়? শেষ কি বার্ককে তুলে দেওয়া নাকি বার্ককে শক্তিশালী করা? এ প্রশ্নের মুখোমুখি আজ আমরা এসে গেছি। বার্ককে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। সচিবরা বলে বেড়াচ্ছে বার্কের দরকার কি ?
ঠিক তেমনি ভাবে যে সমস্ত সচিবরা বলেন,বার্কের দরকার নেই তাহলে তারা এই জ্বালানির জগতে ভোক্তার অধিকার সুরক্ষাটা কিরকম ভয়ঙ্কর হয়ে যেতে পারে? তারা এখন সেটা চায়। সুধীসমাজ, শিক্ষিত সমাজ, কোথায় আছি, আমাদের সচেতনতা কোথায়!
আমাদের সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তারা শীর্ষ পদে বসে সমস্ত কথাবার্তা বলতে পারে এবং এর সমস্ত ষড়যন্ত্রকরতে পারে। তারা একাধিকবার প্রস্তাব নিয়ে গেছে বার্ককে ক্ষমতাহীন করার যে বার্ক ক্ষমতাহীন করে রেখেছে, তার যে ক্ষমতা আছে আইনে সেটা তো তাকে করতে দিচ্ছেন ই না, আবার তাদেরকে আইন করে আরো ক্ষমতাহীন করার চেষ্টা করছে। এরাকি গণশত্রু নয়?
এই গণশত্রুদের বিচারকরার ক্ষমতা কিংবা চাওয়ার ক্ষমতাকি আমাদের নেই…….