ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
করোনার অতি সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে প্রতিদিনই নতুন রোগী বাড়ছে। একদিনে শনাক্তের হার ইতোমধ্যেই ছাড়িয়ে গেছে আগের ডেল্টা তাণ্ডবের দৈনিক শনাক্তের হারকে।
ওমিক্রনে আক্রান্ত হবেন অনেকেই, তবে এতে ডেল্টার মতো জটিলতা নেই এবং একে মৃদু বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল প্রথম দিকে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই করোনায় মৃত্যু বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব বলছে, প্রতি সপ্তাহেই তার আগের সপ্তাহের তুলনায় মৃত্যু বাড়ছে।
গত সপ্তাহে (২৪-৩০ জানুয়ারি) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু তার আগের সপ্তাহের (১৭-২৩ জানুয়ারি) চেয়ে বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। ১৭-২৩ জানুয়ারিতে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছিল ৮৮ শতাংশ।
গত সপ্তাহে (২৪-৩০ জানুয়ারি) মারা গেছেন ১৪০ জন। ২৪ ঘণ্টায় (৩০-৩১ জানুয়ারি) মারা গেছেন ৩১ জন। এর আগে ৩০ জানুয়ারি ৩৪ জন, ২৯ জানুয়ারি ২১ জন, ২৮ জানুয়ারিতে ২০ জন, ২৭ জানুয়ারি ১৫ জন, ২৬ জানুয়ারি ১৭ জন, ২৫ জানুয়ারি ১৮ জন ও ২৪ জানুয়ারি ১৫ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ওমিক্রন মৃদু হলেও রোগী এভাবে বাড়তে থাকলে যাদের কোমরবিডিটি রয়েছে (আগে থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত) তাদের জন্য যে কোনও ভাইরাসই ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সেইসঙ্গে টিকা না নেওয়া থাকলেও ঝুঁকি বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
শুরু থেকেই জনস্বাস্থ্যবিদরা বলে আসছেন, টিকা করোনা থেকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায় না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও আইসিইউ পর্যন্ত যাওয়ার হার কমাতে পারে, কমাতে পারে জটিলতা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, গত সপ্তাহে যে ১৪০ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে ১০৯ জনই টিকা নেননি। বাকি ৩১ জন নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৮০ জন আর নারী ৬০ জন। দুজন ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা।
ওই ১৪০ জনের মধ্যে কোমরবিডিটি ছিল ৮৬ জনের। অনেকে আবার একাধিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
অধিদফতর জানাচ্ছে, মারা যাওয়া ১৪০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ছিলেন উচ্চ রক্তচাপে— শতকরা ৬৫ দশমিক ১ শতাংশ। এরপর ছিল ডায়াবেটিস— ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ।
২৬ দশমিক ৭ শতাংশ আক্রান্ত ছিলেন কিডনি রোগে। হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন ২০ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ আক্রান্ত ছিলেন বক্ষব্যধিতে। ৪ দশমিক ৭ শতাংশ করে আক্রান্ত ছিলেন নিউরোলজিক্যাল ও ক্যান্সারে। গ্যাস্ট্রোলিভার, স্ট্রোক, বাতজ্বর, রক্তজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন ২ দশমিক ৩ শতাংশ করে। অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত ছিলেন ১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যেসব মৃত্যু হচ্ছে তার অধিকাংশই ওমিক্রনের প্রভাব। সেইসঙ্গে ডেল্টাও রয়েছে। তাছাড়া টিকা না নেওয়াটাও বড় কারণ।
এত মৃত্যু ওমিক্রনের প্রভাব কিনা জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এখন যেসব মৃত্যু হচ্ছে, সেটা ডেফিনিটলি ওমিক্রনের প্রভাব।’
ওমিক্রনের যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিক সংক্রমণ) তার ফলেই ছয় জানুয়ারি থেকে শনাক্তের হার এ পর্যায়ে এলো বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘ওমিক্রনে মৃত্যু হচ্ছে। এখন তা কোথায় গিয়ে থামে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ওমিক্রন অন্য কোনও ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কোনও অংশে কম না।’
মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘শনিবারে যে সপ্তাহটা শেষ হলো, তাতে কিন্তু মৃত্যু আগের সপ্তাহের চেয়ে বেশি। এটা অবশ্যই ওমিক্রনের প্রভাব।’
‘তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করতে হবে। জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হবে। অধিকাংশই যে ভ্যাকসিনেটেড (টিকাগ্রহীতা) নয়, সেটা বোঝা যাচ্ছে। তবে তারা শনাক্ত হয়েছেন কবে সেটা যদি বের করা যায় তাহলে এ মৃত্যু নিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে’, বলেন তিনি।
‘তবে আমার ধারণা, যখন থেকে ওমিক্রনের ঢেউ শুরু হলো, অর্থাৎ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ—তারপর থেকে এসব রোগীরা আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এসব মৃত্যু নিয়ে আরও তথ্য-উপাত্ত দরকার।’ যোগ করেন ডা. মুশতাক।