ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: সবজির ভান্ডার খ্যাত শেরপুরে এবার প্রথমবারের মতো ব্রকোলি চাষ শুরু হয়েছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভ ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় ব্রকোলি চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, শীতকালীন সবজি ব্রকোলি দেখতে অনেকটা ফুলকপির মতাে। ব্রকোলি সিদ্ধ করে যেমন খাওয়া যায় তেমনই স্যুপ, ভাজি, পাকােড়া হিসেবে খেতেও সুস্বাদু। এটি হৃদরোগ, বহুমূত্র এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। ব্রকোলি জারণরোধী ভিটামিন এ এবং সি সরবরাহ করে কোষের ক্ষতি রোধ করে।
ব্রকোলিতে পাওয়া যায় উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি। দিনে মাত্র ১০০ গ্রাম ব্রকোলি শরীরে প্রতিদিনের ভিটামিন সি এর চাহিদার ১৫০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। তাই পুষ্টিগুণসম্পন্ন এই সবজি চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে শেরপুরের কৃষকদের।
শেরপুরের শ্রীবরদীর কলেজছাত্র সোবাহান আলী। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজে স্বাবলম্বী হতে চান। সোবাহান বলেন, ১০ শতাংশ জমিতে প্রথমে তরমুজ চাষ করেছিলাম। কিন্তু বীজ নষ্ট হওয়ায় আবাদ ভালো হয়নি। এক পর্যায়ে ইউটিউবে বিদেশি সবজি ব্রকোলি চাষ সম্পর্কে জানি।
এরপর ইউটিউব ও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ধারণা নিয়ে আমার পতিত ১০ শতাংশ জমিতে ব্রকোলি চাষ করি। এ জন্য আমার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। প্রথমবার আবাদও বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি, খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকবে ৮ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি পিস ব্রকোলি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা দরে।
সোবাহানের ব্রকোলি চাষ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন এলাকার অন্য চাষিরাও। স্থানীয় চাষি খলিলুর রহমান বলেন, আমগো এলাকায় কি বিদেশি সবজি হইব? সেটা নিয়ে এক সময় চিন্তা করতাম। সোবাহানের ব্রকোলি চাষ ও লাভ দেখে এখন সাহস পাইছি। তাই বাড়ির সামনে এক খণ্ড জমিতে ব্রকোলি চাষ করছি। ভাবতেছি এবার আবাদ ভালো হইলে সামনের বছর আরও বেশি করে চাষ করুম।
চাষি আব্দুল মােতালেব বলেন, সবজিডা দেখতে ফুলকপির মতো। গ্রামের সবার দেখাদেখি আমিও চাষ করেছি। প্রথম দিকে ভয় পাইছিলাম। কারণ দেখতে ফুলকপির মতো হলেও ব্রকোলির রং সবুজ। ক্রেতারা কিনবে তো। কিন্তু বাজারে এখন প্রতি পিস ব্রকোলি ২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। ব্রকোলি স্বাদে-গুণে অন্যরকম। ২০ শতাংশ জমিতে ১৮ হাজার টাকার মতো খরচ করেছি। এ পর্যন্ত ৮ হাজার টাকার ব্রকোলি বিক্রি হয়েছে। জমিতে আরও ব্রকোলি আছে। আশা করছি খরচ বাদে ১২ হাজার টাকার মতো লাভ হবে।
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, এ অঞ্চলে প্রথমবারের মতো বিদেশি সবজি ব্রকোলি চাষ হয়েছে। তাই এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ স্থানীয় কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। উৎপাদন ভালাে হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। ব্রকোলি চাষে ব্যয়ের তুলনায় লাভের সম্ভাবনা বেশি। আমরা আশা করছি, আগামীতে শেরপুরে এই সবজির আবাদ অনেকটাই বাড়বে।