ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের জনজীবন স্বাভাবিক হলেও দোটানায় বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন বাংলাদেশিরা। হয়তো রাশিয়া হামলা করতে পারে, আবার নাও করতে পারে- এমন চিন্তায় আছেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে কেউ কেউ দুই-একদিনের মধ্যে হামলা হবে- এই আশঙ্কায় রাজধানী ছেড়ে রওনা হয়েছেন পোল্যান্ডের সীমান্তঘেঁষা লেভিভ অঞ্চলে। এখন বাংলাদেশিদের মনে প্রশ্ন- হামলা হলে যাবে কোথায়, পোল্যান্ড কি বাংলাদেশিদের আশ্রয় দেবে?
ইউক্রেনের পশ্চিমে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণ-পশ্চিমে রোমানিয়া ও মলদোভা, দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগর ও আজভ সাগর, পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তরে বেলারুস। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাটোর সদস্য হওয়া নিয়ে রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ইউক্রেন ঘিরে রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েনের পর এখন যেকোনও মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেন যোগ দিলে দেশটিতে ন্যাটোর সেনারা আসবেন। আর বিষয়টিকে রাশিয়া নিজেদের জন্য চরম হুমকি মনে করে। ন্যাটোর সদস্য হওয়া কিংবা না হওয়ার বিষয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত জানতে চায় মস্কো। ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ত্যাগ করতে বলেছে।
ইউক্রেনে সাম্প্রতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ওই দেশ ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে পোল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় দূতাবাস।
দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবিলম্বে ইউক্রেন ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। অন্য কোনও দেশে যেতে না পারলে তারা বাংলাদেশে যেতে পারেন। ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করে পরে দূতাবাসের পক্ষ থেকে পরামর্শ হালনাগাদ করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, একইসঙ্গে সব বাংলাদেশিকে অত্যাবশ্যকীয় না হলে ইউক্রেনে সব ধরনের ভ্রমণ পরিহার করার পরামর্শও দেওয়া হলো। এছাড়া ইউক্রেনে অবস্থানরত সব বাংলাদেশিকে তাদের অবস্থানের তথ্য দূতাবাসকে অবহিত রাখার অনুরোধও করা হয়। যাতে জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাস তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ কেউ এখনই হামলার আশঙ্কা না করলেও অনেকেরই ধারণা হয়তো আগামীকালই হামলা হতে পারে। আর এই আশঙ্কায় অনেকেই ট্রেনে রওনা হয়েছেন পোল্যান্ডের সীমান্ত ঘেঁষা লেভিভে। বর্তমানে কী পরিমাণ বাংলাদেশি সেদেশে অবস্থান করছেন তার ধারণা কারও কাছে নেই। তবে বৈধ অবৈধ মিলে দুই থেকে আড়াই হাজার হতে পারে বলে জানান তারা।
এদের একটি বড় অংশই সেখানে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছেন। অবৈধরা বেশিরভাগই রাশিয়া বিশ্বকাপের পর সেদেশে প্রবেশ করেছেন।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ফাত্তা খান বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ার রাশিয়া আক্রমণ করতে পারে এমন ধারণা অনেকের। বিভিন্ন শহরে বন্ধুবান্ধব আছে, সবাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলছে। রাশিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা শহরের একজনের সঙ্গে কথা বললাম। সেও বললো সমস্যা নেই। তবে টিভি চ্যানেলে যেভাবে সংবাদ প্রচার হচ্ছে তাতে আমরা ভয় পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে বলা হচ্ছে পোল্যান্ডের সীমান্তের দিকে যেতে। আমরা এই আবহাওয়ায় সেখানে গিয়ে কী করবো। দূতাবাস যদি সীমান্তে ক্যাম্প তৈরি করে বাংলাদেশিদের জন্য সেইফ জোন বানিয়ে রাখতো তাহলে যাওয়া যেতো। এখান থেকে তো গিয়ে থাকা লাগবে হোটেলে, এখানে এক মাসে যে ভাড়া দেই হোটেলের ভাড়া সেটা দুই দিনে চলে যাবে। সবার পক্ষে তো সেটা সম্ভব নয়। দূতাবাস বলছে অন্য দেশে যেতে, কিন্তু আমাদের তো অন্য দেশ ভিসা দেবে না। ইউক্রেনের পাসপোর্ট যাদের আছে তাদের যেতে দেবে হয়তো। আমাদেরকে তো ভিসা প্রসেস করে যেতে হবে। আর ইউরোপ তো কোনোদিন আমাদের প্রবেশ করতে দেবে না। এখানে স্টুডেন্টদের কাছে টেম্পোরারি কার্ড আছে। সেটার মেয়াদ যতদিন আছে ততদিন আমরা এখানে বৈধ। আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।