নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে আজ সোমবার বিকালে ঢাকা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে দেশটির সঙ্গে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে চায় বাংলাদেশ। এমনটাই জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, এ সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, সরাসরি শিপিং লাইন চালু, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনে টেকসই উন্নয়ন, আইসিটি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেবে ঢাকা।
ড. মোমেন বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে পাঁচদিনের সফরে আগামীকাল সোমবার (৭ মার্চ) দেশটি সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সফরে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আমাদের মোট আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। তবে বাণিজ্য ঘাটতি এখনো দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো। এর মূল কারণ আমরা তাদের কাছ থেকে শুধু জ্বালানি তেল আমদানি করি। রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়ানোর জন্য এই সফরে গুরুত্বারোপ করা হবে। সেজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সরাসরি শিপিং সার্ভিস চালু নিয়ে আলোচনা করা হবে।
মোমেন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়েছিলাম, তখন এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরে তা আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আমিরাতের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাঝে জয়েন্ট বিজনেস ফোরামের আয়োজন করা হবে। যা আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য খুবই লাভজনক হবে বলে আমি মনে করি। এতে সৃষ্টি হতে পারে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র।
তিনি বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ টেকসই উন্নয়নের জন্য আমিরাতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে আলোচনায় বসব। এছাড়া আইসিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা দুই দেশের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময়ের নতুন নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে ইচ্ছুক।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে কয়টি এমওইউ হবে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, এ সফরে আমরা চারটির মতো এমওইউ করব। তবে কোন বিষয়গুলোতে এমওইউ করা হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি তিনি।
বাংলাদেশের জন্য আমিরাত কেন গুরুত্বপূর্ণ তার ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের দেশের একটি বড় শ্রমবাজার হলো মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এই একটি দেশ থেকেই বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। করোনাকালীন সময়ে আমিরাত দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তারপরও আমাদের জন্য তাদের শ্রমবাজার আংশিক খুলে দিয়েছে দেশটি, যা একটি কূটনৈতিক সাফল্য। গত অর্থবছরে এই করোনার সময়েই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক আমিরাত গেছেন। আশা করছি, ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
ড. মোমেন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আমিরাত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে সামনে রেখে তারা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে এই দেশটি বিশ্বে অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। অতএব, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, শ্রমবাজার ঠিক রাখা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুসংহত করে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্ক অত্যন্ত সলিড জানিয়ে মোমেন বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, সলিড রিলেশন। তারা আমাদের অনেক সম্মান দেয়। প্রধানমন্ত্রীকে তারা এ সফরে সর্বোচ্চ সম্মান দেবে। আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করছি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ডাকা জরুরি বৈঠক বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থানের জানান দেয়। তবে আমিরাত ইউক্রেনের পক্ষে অবস্থান নেয়। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ইউক্রেন নিয়ে কোনো আলোচনা তোলা হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা নিয়ে আলোচনা তুলতে চাই না।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে যা থাকছে
আমিরাত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি দুবাই এক্সপোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করবেন। একইসঙ্গে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন। সফরে তিনি আমিরাতের জাতির মাতা শেখা ফাতিমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রাস আল খাইমাতে বাংলাদেশি কমিউনিটি স্কুল ‘বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল’-এর নতুন ক্যাম্পাসে একটি ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। এছাড়া তিনি দুবাই এক্সপোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখবেন, যেখানে গত বছর থেকে বাংলাদেশের সাফল্য সমগ্র বিশ্বের সামনে নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।