নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিংয়ে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরপরেও অনেকে গোপনে অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নিলে ভোক্তা অধিদপ্তরের হটলাইনে কল করে অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তরা। একই সঙ্গে তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দাম অর্থাৎ ন্যায্যমূল্যও জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১১ মার্চ) অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করে দেয়। সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া বাজারমূল্য অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরামূল্য ১৬৮ টাকা এবং বোতলজাত ৫ লিটারের দাম ৭৯৫ টাকা। এছাড়া খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার সর্বোচ্চ ১৪৩ টাকা এবং খোলা পাম অয়েল লিটারপ্রতি ১৩৩ টাকা।
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘অনেকেই ভোজ্যতেলের প্রকৃত দাম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। এটা প্রচার করা বেশি প্রয়োজন। কারও কাছ থেকে নির্ধারিত দামের বেশি নেওয়া হলে, আমাদের হটলাইন ১৬১২১ নম্বরে কল করে অভিযোগ জানাতে হবে। আমরা দ্রুত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে হঠাৎ করেই সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে রিফাইনারি কোম্পানিগুলো। ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতি তেলের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সব রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের কাছে এ ভোজ্যতেলের আমদানি ও রিফাইনের পরিমাণ জানতে চিঠি দেয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এদিকে, ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে দাবি করে আসছেন তেল সরবরাহকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের দাবি, আগের মতোই তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল সরবরাহ করছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা রমজান সামনে রেখে সয়াবিন মজুত করছেন। এজন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, সয়াবিন সরবরাহকারী কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের তেল দিচ্ছে না। ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ওঠাতে পারছেন না তারা। কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ বন্ধ রাখায় বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে।
তবে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যৌথ অভিযানে নামার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। একই সঙ্গে সয়াবিনের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে সরকার।
রমজানকে সামনে রেখে বাজারে যাতে সয়াবিনসহ নিত্যপণ্যের কোনো কৃত্রিম সংকট না হয়, তা কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তবে ভ্যাট প্রত্যাহার হলেও সহসাই তেলের দামে কমবে না বলে মনে করছেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বাজারে তেলের মজুত নিয়ে কারসাজির যেসব অভিযোগ আসছে, তা সব সত্য নয়। অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, যদি তেলের ওপর আরোপিত ভ্যাট কমানোও হয়, তবু সহসাই বাজারে এর প্রভাব পড়বে না। কারণ যেসব তেল ইতোমধ্যে বন্দর থেকে খালাস হয়ে গেছে এবং বাজারে আছে, সেগুলোতে কোনো দাম কমানোর সুযোগ নেই। ফলে নতুন করে বন্দরে তেল না ঢোকা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তের প্রভাব বাজারদরে পড়বে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ছিল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ছিল ১৩৬ টাকা। বোতলজাত সয়াবিনের পাঁচ লিটার তেলের দাম ছিল ৭৬০ টাকা এবং পাম তেলের দাম ছিল ১১৮ টাকা।