ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
নিরাপদ পণ্য ও উন্নত পরিষেবা পেতে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাসহ সবাইকে অধিকার সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্বশীল হতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, উন্নত দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের জনগণের জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগ অধিক মনোযোগী।
প্রধামন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ২০২২ উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব ভোক্তাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থায় ন্যায্যতা’ সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে এ দেশের গণমানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তারই হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছে। আমাদের দূরদর্শিতা, সাহসী এবং প্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলেই সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করা ছিল আমাদের অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও প্রসারের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সেবা খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্য ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় দৃঢ় ও আশাব্যঞ্জক। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থ লেনদেনে মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে বহুগুণ। কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই শুধুমাত্র মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে খুবই দ্রুত, নিরাপদ এবং কার্যকরভাবে ভোক্তারা অর্থ লেনদেন করতে পারেন। যা স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে সবার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ডিজিটাল প্লাটফর্মে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুফল ভোগ করা সম্ভব। ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিরাপদ ও উন্নত সেবা নিশ্চিতকরণে সেবাপ্রদানকারী ও সেবাগ্রহীতা উভয়ের সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, উন্নত দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের জনগণের জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগ অধিক মনোযোগী। এ লক্ষ্যে আমাদের সরকার ২০০৯ সালে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করে। আইনের সফল বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
তিনি বলেন, উন্নত নাগরিক জীবনের অন্যতম সূচক হচ্ছে নিরাপদ পণ্য ও উন্নত পরিসেবা পাওয়ার অধিকার। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। একই সঙ্গে এ অধিদপ্তর ব্যবসায়ী ও ভোক্তার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি। সব ব্যবসায়ী ও ভোক্তার প্রতি আমার অনুরোধ, প্রত্যেককেই অধিকার সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্বশীল হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারিতেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি। যেখানে বিশ্বের বহু উন্নত দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, সেখানে আমরা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতেই সফল হইনি বরং মহামারি নিয়ন্ত্রণে রেখে বিশ্বের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। এ অধিদপ্তরের সব কর্মচারী মহামারি উপেক্ষা করে বাজার তদারকি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান- আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। বিনির্মাণ করি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, যোগ করেন শেখ হাসিনা।