ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
নৌকায় ভেসে ভেসে কেটে যেত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জীবন। এবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ওই বেদেরাও পেতে চলেছে স্বপ্নের ঘর, পেতে যাচ্ছে স্থায়ী ঠিকানা।
এখনও গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাপের খেলা দেখানো, জাদু দেখানো কিংবা পানিতে পড়ে যাওয়া অলঙ্কার উদ্ধার করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় বেদেদের। দেশের পিছিয়ে পড়া সমতলের এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করতে চায় সরকার। তাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাতেই আশ্রয়ণের ঘর পাচ্ছে তারা।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সমতল পর্যায়ে যে ৫০টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী আছে তাদের জন্য মুজিববর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট সাড়ে ছয় হাজার ঘর নির্মাণ হচ্ছে।
এর মধ্যে বেদে সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় আবাসন হবে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুরে মাজদিয়া বাওর সংলগ্ন এলাকায়।
নদীর প্রতি বেদেদের যে নাড়ীর টান সেটা বিবেচনা করেই মাজদিয়া বাওরের সঙ্গে উঁচু দুই একর জমিতে বেদেদের জন্য তৈরি হচ্ছে ৫৯টি ঘর।
এতদিন ওই জায়গা ছিল বেদখল। সেটা উদ্ধার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আগামী জুন নাগাদ এসব ঘরের কাজ শেষ হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
বেদে পরিবারগুলো এখন বারোবাজার ইউনিয়নে খোলা আকাশের নিচে অন্যের জমিতে ছইয়ের ঘরে বাস করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটি ফেলে নির্মাণ এলাকা ভরাট করা হয়েছে। স্তূপ করে রাখা হয়েছে সারি সারি ইট। ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।
৫৯টি পরিবারের প্রায় ৩০০ লোকের বাসস্থান হবে এখানে। শুধু বাড়িই নয়; মসজিদ, কবরস্থান ও খেলার মাঠও থাকবে।
কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের মদিনাপাড়ার ৭০ বছর বয়সী শফিকুল বলেন, ‘ঘর পাইলে নাতি-নাতনিদের বিদ্বান করবো। ওই স্বপ্নই দেখতেছি। বাপ-দাদারা তো আমাদের পড়াইতে পারে নাই। এখন তালিকা করা হইছে। সবার নাম নিয়া গেছে।’
একই পাড়ার রঙ্গিলা বেগম। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ‘দাঁতের পোকা’ তুলে, ‘শিঙ্গা’ লাগিয়ে কিংবা পানিতে পড়া অলঙ্কার উদ্ধার করে প্রতিদিন ১০০ টাকার মতো আয় তার। দুই সন্তানের জননী এই নারীর স্বামী দেখান বানরের খেলা।
রঙ্গিলা বলেন, ‘আমরা মাঠে ঘাটে থাকি। একটা ঠিকানা আর সামর্থ্য হইলে পোলাপানদের লেখাপড়া করামু।’
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, ঘর পাওয়ার বিষয়টি জেনে বেদেরা বেশ খুশি।
মাইজদি বাওরের পাশে জায়গাটা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ঘরের পাশাপাশি এখানে মসজিদ, কবরস্থান, খেলার মাঠ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটা ঘরে দুটি রুম, রান্নাঘর ও বাথরুম থাকবে। ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা করে।’
‘ঘরের চারপাশে কিছু খোলা জায়গা রেখেছি যাতে গবাদি পশু পালন এবং গাছ লাগানো যায়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন বলেন, জলাধারের সঙ্গে বেদেদের জীবনযাপনের যে ঐতিহ্য— ঘর বানানোর জন্য সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা নির্ধারণ করেছি।
প্রায় দুই একর জমি অবৈধ দখলদারদের কাছে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জমি দখলমুক্ত করেছি। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৪০ লাখ টাকা। পুনর্বাসন সম্পন্ন হলে পরিবারগুলোর নতুন প্রজন্ম নাগরিক সব সুবিধা নিয়ে বড় হবে। বেদেরা একটি উন্নত প্রজন্ম পাবে বলে আশা করছি।’