নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
রমজান মাসে খাদ্যে ভেজাল-দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে সিটি করপোরেশন- এমন ঘোষণা আগে থেকেই দিয়ে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে রমজানের প্রথম দিন সেভাবে তৎপরতা দেখা না গেলেও দ্বিতীয় দিনে এসে সব অঞ্চলেই অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
যদিও নগরবাসী বলছে, রমজান মাসে সাধারণ নাগরিকদের কথা বিবেচনা করে সিটি করপোরেশনকে অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান আরও বাড়াতে হবে।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, আমরা সাধারণ ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আছি। যেকোনো পণ্যই আমাদের বেশি দামে কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে। সিন্ডেকেটের কাছে আমরা অসহায়, এছাড়া প্রতিটি পণ্যই ভেজালে ভরা। আমরা সাধারণ নাগরিকরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই। সিটি করপোরেশন ভেজাল রোধ এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে যে অভিযান শুরু করেছে আমরা চাই এটা আরও বাড়ানো হোক। প্রতিটি ওয়ার্ডে, পাড়া-মহল্লায় তারা অভিযান পরিচালনা করুক। এতে করে আমরা সাধারণ নাগরিকরা কিছুটা হলেও উপকৃত হব।
এদিকে রমজানের দ্বিতীয় দিন সোমবার (৪ এপ্রিল) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন প্রতিটি অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে বিভিন্ন অঞ্চলে খাবারের দোকানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিত্যপণ্যের দোকানে মূল্য তালিকা না থাকায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জরিমানা করা হয়।
ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ অঞ্চল-৫ এ দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অঞ্চল-৫ এর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কারওয়ান বাজার এলাকার ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ দোকানসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দোকান, বাজার, ফলের দোকান ও মাছ-মাংসের দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় মোট এক লাখ দশ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অঞ্চল-৪ এর আওতাধীন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পীরেরবাগ ও মধ্য পীরেরবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবেদ আলী। তিনি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৮টি ভবন, স্থাপনা, জলাশয়, রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাট পরিদর্শন করেন। সবার ঢাকা অ্যাপ-এর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ৩টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেন।
এছাড়া ফুটপাতে মালামাল রেখে জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় স্থানীয় সরকার (ঢাকা সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ এর ৯২ (৩,৭,১৪) ধারায় নির্মাণাধীন ৩টি বাড়ির মালিককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পাশাপশি প্রায় ২০০ মিটার ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে।
এই এলাকায় নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে ২টি হোটেলকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৩ ধারায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অঞ্চল-১ (উত্তরা) এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিডিআর বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়েক। তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় মূল্য তালিকা না টানানোর কারণে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারায় ২টি মামলায় ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পাশাপাশি খাবারের দোকানগুলোতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে সতর্ক করা হয়।
অন্যদিকে অঞ্চল-৬ এর ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরা সেক্টর-১৪ এর জহুরা মার্কেট এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় তিনি আনুমানিক এক কিলোমিটার ড্রেন, রাস্তা ও ফুটপাত থেকে ভ্রাম্যমাণ দোকান অপসারণ করেন। তিনি বলেন, অভিযানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকায় ও অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে রাখায় একটি হোটেলকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি রোডে অবৈধভাবে দখল করে রাখা সব কার্ভাডভ্যান ও পিকআপ অপসারণ করা হয়েছে।
এছাড়া অঞ্চল-২ এর আওতাধীন মিরপুর-১, ব্লক-ডি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে খাবার হোটেলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকায় তিনটি হোটেলকে মোট পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
অভিযান বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে এবং ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে আজ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে মাইকিং করা হয় এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেন। আমাদের অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিটি পণ্যেই ভেজাল, ঊর্ধ্বগতি। আমরা
সাধারণ মানুষরা অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। সিটি করপোরেশনের কাছে আমাদের দাবি তারা যেন সবগুলো এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত মনিটরিংয়ের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা নিয়মিত প্রতিটি এলাকাতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করতে চাই। কিন্তু আমাদের লোকবল সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও এবার আমরা উদ্যোগ নিয়েছি পুরো রমজান মাস নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করব। সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি।