ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: দেশে আমদানির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ছে না রপ্তানি। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৩০ কোটি ডলারে। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ এক লাখ ৯১ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময় ছিল এক হাজার ২৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার।
আমদানির তুলনায় পণ্য রপ্তানি কম হওয়ায় বরাবরই বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে বড় ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ— বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। আলোচিত আট মাসে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে তিন হাজার ২০৭ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৩৮ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় দুই হাজার ২৩০ কোটি ডলার।
আলোচিত আট মাসে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬১৪ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ৮৬৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৭৩ কোটি ডলার।
বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রপ্তানির তুলনায় বেশি আমদানির কারণে দেশ বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে। তবে বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে যে আমদানি কোন পর্যায়ে হচ্ছে। আমদানির পণ্য কোন খাতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমদানি বাড়ছে মানে শিল্প কারখানার উৎপাদন বাড়ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, এটি অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। সেটা হলো— আমদানি-রপ্তানির মধ্যে অর্থপাচার যেন না হয়।
চলতি হিসাবে ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স)
চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে এ ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৮৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতির বিপরীতে উদ্বৃত্ত ছিল ৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
সামগ্রিক লেনেদেনে ঘাটতি ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার
সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২২ কোটি ২০ লাখ (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে এ সূচকে ৬৮৮ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা ছিল আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম।
এফডিআই বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ২৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ২৫৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে ১১৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১০৪ কোটি ডলার।