আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কলকাতায় বাংলাদেশের নতুন ভিসা সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের বিজয় দিবসে বিধাননগর সল্টলেক সেক্টর ফাইভে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল বাংলাদেশ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের। ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
নতুন এ সেন্টারে ভিসা সংক্রান্ত কাজ করছে ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থা।
সংস্থাটির কাজ আবেদনকারীর পাসপোর্ট জমা নেওয়া থেকে প্রাপকদের পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া। তবে ভিসা দেওয়া বা না দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত থাকছে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাই-কমিশনের হাতেই।
এদিকে নতুন অফিসে এসেছে অমূল পরিবর্তন। চকচকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ১৩ হাজার স্কয়ার ফিটের মধ্যে রয়েছে সব ব্যবস্থা। ৫০০ আবেদনকারীর বসার ব্যবস্থা, বিত্তবানদের জন্য প্রিমিয়াম লাউঞ্জ, ক্যাফে এরিয়া, পৃথক শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, দেয়ালজুড়ে বাংলাদেশের ইতিহাস, নারী-পুরুষের পৃথক নামাজের ব্যবস্থা, বেবি ফিডিং রুমসহ মোট ১৫টা কাউন্টরে সার্ভিস দিচ্ছেন ২৫ জন ভারতীয় স্টাফ। ভিসা আবেদনকারীরা প্রবেশমাত্রই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সেন্টারের কর্মীরা। বিমান বন্দরের মতো ভেতরে নিয়ে যাওয়া যাবে না সিগারেট, পানসহ নেশার দ্রব্য। বন্ধ রাখতে হবে ল্যাপটপ।
জানা গেছে, একটা ভ্রমণ ভিসা পেতে প্রসেসিং ফি বাবদ ভারতীয়দের দিতে হচ্ছে ৮২৫ রুপি। তবে এ অর্থ বাংলাদেশ বা ভারত সরকার কেউ পাচ্ছে না। পাচ্ছে ওই বেসরকারি সংস্থাটি। এখানেই শেষ নয়, প্রয়োজনে একটা ফটোকপির জন্য দিতে হবে ১০ রুপি, প্রিন্ট আউট ১৫ রুপি, চার কপি ছবি ২শ’ রুপি এবং আবেদনকারীর ভিসা ফর্ম পূরণ করতে লাগবে ৩শ’ রুপি। অবশ্য অনলাইন ফর্ম বাইরে থেকেও পূরণ করা যাবে। এর বাইরে আছে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’সার্ভিস। এছাড়া বাড়ি বসে ভিসা পেতে পাসপোর্ট প্রতি দিতে হবে ৪ হাজার রুপি এবং লাউঞ্জ ব্যবহারে মাথাপিছু লাগবে ৩৫শ’ রুপি।
বাংলাদেশ ভিসার ফরম পূরণ করতে হবে অনলাইনে। তবে সার্ভার দুর্বল হওয়ায় ফর্ম পূরণ করতে সময় লাগছে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট।
কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা কৌশিক সেন, তার পরিবারের চার সদস্যর জন্য ফাস্ট ট্র্যাক সার্ভিস নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, সার্ভারে সমস্যার কারণে অনেক সময় লাগে। এর থেকে আগের সিস্টেম ভালো ছিল। দালালকে ৫০ রুপি দিয়ে ২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট জমা দেওয়া যেত। এখন সময়ের সঙ্গে রুপিও বেশি খরচ হয়।
এদিকে এ সমস্যার কথা স্বীকার করে কলকাতার বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান তৌফিক হাসান বলেন, এমন সমস্যার কথা আমরা শুনেছি। বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছি। দ্রুতই এর সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া এখন দালালের সমস্যা মোটামুটি সমাধান করা হয়েছে।
এদিকে বীরভূম জেলা থেকে আগত ভুবন মোল্লার মতে, কলকাতা বা সল্টলেক আমাদের কাছে দুটোই সমান। কিন্তু জানিই না যে বাংলাদেশ মিশন বা উপদূতাবাস থেকে ভিসা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমার মতো অনেককেই একবার মিশন গিয়ে খোঁজ নিয়ে সল্টলেক আসতে হচ্ছে। এতে অন্তত দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মিশন জানায়, অফিসের সার্ভিস নতুন চালু করা হয়েছে। তাই সবার জানতে একটু সময় লাগছে। তবে ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মাধ্যমে সব তথ্য দেওয়া আছে।
এদিকে নতুন ভিসা অফিস সম্বন্ধে অনেকেরই ধারণা না থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগতারা পুরনো ভিসা সেন্টারের বাইরে ফুটপাতে রাত কাটাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় এবং সিকিম এই ছয়টি রাজ্য কলকাতার বাংলাদেশ মিশনের ভিসা জোনের আওতার মধ্যে পড়ে।