কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি,
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় পেঁয়াজের বাজারদর কয়েকগুণ কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। বিক্রি না করে বাজার থেকে পেঁয়াজ ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন অনেক কৃষক।
উপজেলার পান্টি ডিগ্রি কলেজ মাঠে শুক্রবার সকালে সাপ্তাহিক হাট বসে। সেখানে সরেজমিনে কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে তাদের খরচ হয়েছে ২০-৩০ হাজার টাকা। আর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩৫০-৮০০ টাকা মণ। এতে তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।
কৃষকদের দাবি, দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ হয় তা দিয়েই চাহিদা মেটানো সম্ভব। তাই সরকারের উচিত ভারতের পেঁয়াজ আমদানি না করা।
হাটে থাকা কৃষক, ব্যবসায়ী ও হাট পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। আর বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৮-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা উৎপাদন খরচের তুলনায় কয়েকগুণ কম। দাম কম থাকায় অনেক কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি না করে ফিরে গেছেন।
হাটে গিয়ে দেখা যায়, কেনাবেচা প্রায় শেষের দিকে। ব্যবসায়ীরা ক্রয় করা পেঁয়াজ মজুত ও বিক্রয়স্থলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন। কিছু কৃষক ভালো দামের আশায় পেঁয়াজ নিয়ে বসে আছেন। পান্টি এলাকার বিভিন্ন সড়কে পেঁয়াজ বিক্রি না করে ফেরত নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়।
কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। সার, ওষুধ, বীজ, সেচ, শ্রমিকের দাম সব মিলে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। হাটে পেঁয়াজের দাম কম। খরচের টাকা উঠছে না।
কাঞ্চনপুর গ্রামের কৃষক চঞ্চল শেখ বলেন, বিক্রির জন্য ২৭ মণ পেঁয়াজ এনেছিলাম। কিন্তু দাম খুবই কম। তাই ফেরত নিয়ে যাচ্ছি। পেঁয়াজ এত অখাদ্য হয়ে গেছে যে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক আমজাদ উদ্দিন বলেন, ১২ মণ পেঁয়াজ বিক্রির জন্য হাটে এনেছিলাম। কিন্তু দাম নাই পেঁয়াজের। তাই না বেঁচে ফেরত নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ হয়, এতেই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তাই সরকারের উচিত ভারতের এলসি পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ৪৫০ টাকা মণ পেঁয়াজ কিনেছি। আকার ও মানভেদে প্রতি মণ ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা পড়েছে। মালগুলো আজই ট্রাকে করে কুমিল্লা নেওয়া হবে।
পান্টি সাপ্তাহিক পেঁয়াজ হাটের ইজারাদার এইচ এম আব্দুল্লাহ টিপু বলেন, আজ হাটে ৬-৭ হাজার টন পেঁয়াজের আমদানি হয়েছিল। কিন্তু দাম কম থাকায় অসংখ্য কৃষক বিক্রি না করে ফেরত নিয়ে যান। প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৮-২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম বলেন, এ বছর উপজেলায় ৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। এবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের ২৩-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পেঁয়াজের বাজারদর উৎপাদনের খরচের অনেক কম। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।