ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে এরই মধ্যে রাজধানী ছেড়েছেন অধিকাংশ মানুষ। রাজধানী এখন বলতে গেলে প্রায় ফাঁকা। বাজারে ক্রেতা সমাগম কম। ক্রেতা সংকটের এই বাজারেও হঠাৎ করেই বেড়েছে সেমাই, পোলাওয়ের চালসহ শাকসবজির দাম। এর সঙ্গে মসলা ও তেলের বাজারও চড়া।
সোমবার (২ মে) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এম চিত্র দেখা গেছে। এসব বাজারে দেখা যায় সয়াবিন তেলের সংকট। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। দাম বেড়েছে প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই।
সেমাই দিয়েই শুরু হয় ঈদের সকাল। প্রিন্স, বনফুল, কুলসন, কিষোয়ানসহ বিভিন্ন কোম্পানির ২০০ গ্রাম ওজনের সেমাইয়ের প্যাকেটের দাম এবছর ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। প্রতি কেজি লম্বা খোলা সেমাই কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরও বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বৃদ্ধি ও দেশে সরবরাহ স্বল্পতার প্রভাব পড়েছে ঈদপণ্যের ওপর। সেমাই, নুডলসসহ ময়দায় তৈরি অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
প্রতিবছরই ঈদের সময় চাহিদা বাড়ে পোলাওয়ের চালের। গত এক মাসের ব্যবধানে খোলা ও প্যাকেটজাত পোলাওয়ের চালের দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভালো মানের খোলা পোলাওয়ের চাল কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনিগুড়া পোলাওয়ের চাল কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকা দরে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা।
ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে মাছের সরবরাহ কম। তাই মাছের দামও বেড়েছে। বাজারে বড় রুই প্রতি কেজি ৩২০ টাকা এবং তিন-চার কেজি ওজনের রুই প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট রুই (নলা) ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম সাইজের প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং এক থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতি কেজি ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাতল মাছ তিন-চার কেজি ওজনের প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৫০ টাকা, দেড় কেজি ওজনের মৃগেল প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, চায়না গাজর ১১০ টাকা, দেশি টমেটো ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের আগেরদিন বাজারে ভোজ্যতেলের সংকটে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানেই তেল নেই। দু/একটি দোকানে মিললেও দাম বেশি চাইছেন বিক্রেতারা। বাজারে খোলা তেল ১৮৫ টাকা লিটার বিক্রি করা হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। ৫ লিটার তেল গায়ের রেটের চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশি চাইছেন বিক্রেতারা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ করছে না। যা দিচ্ছে, তাতেও শর্তজুড়ে দেওয়া হচ্ছে। চা পাতা নিতে হবে, না হলে তেল দেবে না তারা।
তবে তেল সরবরাহকারী কোম্পানি ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দাবি, তেল সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। খুচরা বিক্রেতারা তেল মজুত করায় বাজারে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টন সয়াবিন তেল বাজারে সরবরাহ করছি। ঈদের পর দাম বাড়তে পারে, এ কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা তেল মজুত করছে। ফলে বাজারে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।